মঙ্গলবার, মার্চ ২৫

নিযামুদ্দিন বাংলেওয়ালী মসজিদে একদিন হযরত মাওলানা উমর পালনপুরী সাহেব রহ. বয়ান করছিলেন। বয়ানের মধ্যে উনি এই কথা বললেন যে, ‘ফাতাহ মক্কার পরে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন কয়েকজনের ব্যাপারে যে, তাদেরকে যদি পাও তাহলে তাদের ক্বতল কর। আর তাদের মধ্যে ওয়াহশি রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন। যেহেতু হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ক্বাতিল ছিলেন, সেজন্য রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে ক্বতলের হুকুম দিয়েছেন’। এই জাতীয় একটা ঘটনা উনি বললেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা ওয়াহশি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হেদায়েত দিয়েছেন।

হযরত মাওলানা পালনপুরী সাহেব রহ.-এর এই বয়ানের পরেই হযরত মুশফিক আহমাদ রহ. উনার কাছে গেলেন আর গিয়ে বললেন- ‘‘ওয়াহশি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম আনার যে ঘটনা হায়াতুস সাহাবাতে আছে, ঐটা আপনার কথার সাথে মিলে না’’। হযরত পালনপুরী সাহেব রহ. বললেন, “কী?” এরপর হযরত মুশফিক আহমাদ রহ. আরেকটু বলতে চাইলেন, কিন্তু উনার কথা হযরত পালনপুরী সাহেব রহ. বেশি শুনলেন না। বরং উনি বললেন, “তুমি মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবের কাছে যাও আর উনাকে গিয়ে বলো”। এর মানে, মাওলানা পালনপুরী সাহেব মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবকে আলিম হিসেবে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, উনার ব্যাপারে সমালোচনা মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবের কাছে পাঠাতে বললেন। উনি এটাও বললেন যে, “ইব্রাহীম সাহেবের কাছে যাও, উনার কাছে গিয়ে বলো, আর উনি কী বলেন ঐটা আমার কাছে এসে শুনাও”।

উনার কথা মত মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবের কাছে হযরত মুশফিক আহমাদ রহ. গেলেন, আর গিয়ে বললেন যে, “ওয়াহশি রাদিয়াল্লাহু আনহু হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যে ক্বতল করেছিলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতাহ মক্কার পরে ওয়াহশি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ক্বতলের হুকুম দিয়েছিলেন, যদিও ঐটা কার্যকরী হয়নি, উনি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু হুকুম তো দিয়েছিলেন- এরকম কথা নাকি? আর হায়াতুস সাহাবাতে আছে অন্যরকম। ওখানে উল্লেখ আছে যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে দাওয়াত পাঠালেন, উনি ফেরত পাঠালেন। আবার দাওয়াত পাঠালেন, আবার ফেরত দিলেন। আবার দাওয়াত পাঠালেন, এভাবে কয়েকবারের পরে কবুল করলেন”। মাওলানা ইব্রাহীম সাহেব (মাওলানা পালনপুরী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুরব্বী) সত্য কথাও বলবেন, আদবও রক্ষা করবেন। উনি বললেন না যে, ‘এই কথা ভুল’। উনি বললেন, ‘‘ভাই, আমার তো এরকম কথা জানা নেই’’। উনি আদবও রক্ষা করলেন, কিন্তু পালনপুরী সাহেবের কথাকে সমর্থন করলেন না। এরপর এই কথা বললেন যে, “হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ক্বতল করেছেন যুদ্ধের ময়দানে আর যুদ্ধের ময়দানের বিচার যুদ্ধের বাইরে আর হয় না। ঐটার কিসাস হয় না। স্বাভাবিক সমাজে যে ক্বিতাল হয়েছে, ঐটার কিসাস আছে। যুদ্ধের ভিতরে ক্বতলের জন্য যুদ্ধের বাইরে কিসাস হয় না। অতএব, এটাতো নীতিগতভাবেও মিলে না”।

এরপর হযরত মাওলানা পালনপুরী সাহেব রহ-এর কাছে হযরত মুশফিক আহমাদ রহ. এলেন, যেহেতু উনি আগেই বলেছিলেন মাওলানা ইব্রাহীম সাহেব যা বলেন সেটা উনাকে শুনাতে। মাওলানা পালনপুরী সাহেব রহ.-এর কাছে গিয়ে মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবের কথা হযরত মুশফিক আহমাদ রহ. শুনালেন। শুনে তখন উনি বললেন যে, “তাহলে তো আমার এই কথা বলা ঠিক হয়নি”। উনি সংশোধিত হয়ে গেলেন।

আল্লাহর মেহেরবানিতে আমাদের আকাবীরদের মধ্যে এই ধরণের সংশোধনের মেজাজ ছিল, আর এটাই দ্বীন। সংশোধনের এই মেজাজ যখন নষ্ট হয়ে যাবে, তখন এটা আর দ্বীন থাকে না। তখন যেভাবেই হোক এটার মোকাবেলা করতে হয়।

১ Comment

  1. blank

    আল্লাহর মেহেরবানিতে আমাদের আকাবীরদের মধ্যে এই ধরণের সংশোধনের মেজাজ ছিল, আর এটাই দ্বীন। সংশোধনের এই মেজাজ যখন নষ্ট হয়ে যাবে, তখন এটা আর দ্বীন থাকে না। তখন যেভাবেই হোক এটার মোকাবেলা করতে হয়।

    মোকাবেলার নামে ওজাহাতি জোড় করতে হবে। যাতে করে যারা কিনা কে মুরুব্বী তার নাম না জানলেও তার দোষ সম্পর্কে জেনে দীনের কামকে ঘৃনা করতে শুরু করে। মুশফিক আহমাদ স্যার রহ. তো ভুল করেছেন ওনার তো উচিত ছিল সাথে সাথে দেশে এসে দেশের তাবৎ ওলামায়ে কেরাম কে সাথে নিয়ে ওজাহাতী জোড় করা। যাতে করে কে মাওলানা ওমর পালনপুরী সে কথা বাদ তবলীগের মুরুব্বী ভুল বয়ান করতেছে এরা গোমরাহ……

Leave A Reply