বুধবার, মার্চ ২৬

আগের জমানায় আল্লাহওয়ালারা বছরের পর বছর একা একা সফর করতেন। ওলিআল্লাহদের জীবনে এটা প্রচুর পাওয়া যায়, একা বছরের পর বছর সফর করতেন। কোথায় যে যাচ্ছেন সেটাও জানেন না। তো একা একা যখন থাকেন তখন খাওয়া দাওয়ার কোন বন্দোবস্ত আছে নাকি? কিছুই নাই। আল্লাহ দিলে খেলাম, না দিলে না খেলাম। মসজিদের এক জায়গায় বিশ্রাম করছেন, দু’তিন দিন হয়েছে কোন খাবার নাই, ক্ষুধা, শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। তারপর আবার আগে যেতে চান তো পা চলে না। তো আল্লাহওয়ালা যারা থাকেন, সব জিনিসেই ভাল দিকটা বুঝতে পারেন। তিন দিন উপবাসের পরে যখন পা চলছে না, তখন আল্লাহর কাছে শুকুর আদায় করলেন। কী শুকুর? “হে আল্লাহ, একটা জিনিস আমি আমি জানতাম না, তুমি মেহেরবানী করে আমাকে জানালে, বুঝালে”। কী জিনিস? “আমার এ ভুল ধারণা ছিল যে মানুষ পা দিয়ে হাটে, এখন বুঝলাম পেট দিয়ে হাটে”। তিনদিন থেকে পেট খালি, এখন আর পা চলে না। তো ভুল ধারনার উপর ছিলাম যে পা দিয়ে হাটতাম, অথচ হাটছি পেট দিয়ে। এ কথা বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন, আল্লাহ তুমি আমাকে বুঝালে। আর যখন একথা বুঝতে পারলেন তখন মনে মনে ভাবছেন যে, আরো কতদিন উপবাস করলে আল্লাহ জানেন আরো কত কিছু শিখবো!

তো একদিনেই অনেক কিছু শিখলাম কিনা? আরেকটু শেখার দরকার আছে না? তো শেখার দরকার থাকলে কি এখন বাড়ি চলে যাব নাকি? নাকি যারা আছে, সামনে আরো সফর আছে ইনশাআল্লাহ। সফর সব ধরনের। ঐ এর ভিতরেই এখন পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে জাহেরি ভাবেও অনেক সাহায্য করছেন। অনেকদিন থেকেই তো এরকম জামাত চলছে, আর অনেকদিন থেকেই এরকম এক মসজিদ থেকে বের হল তো আরেক মসজিদে গেল, ওখান থেকে বের হল, আরেক মসজিদে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আল্লাহর ফযলে কাউকেই সারারাত রাস্তায় থাকতে হয় নি। কোন না কোন একটা বন্দোবস্ত হয়েই যায়। কোথা থেকে হয়েছে আমাদের কারো জানা নাই, কিন্তু হয়ে যায়।

এই যে এই জামাতের এখানে বন্দোবস্ত হল। আরেকবার আমরা ছিলাম এক জামাতে, তিনটা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরে রাত হয়ে গেছে। কেউ একজন বলল যে এখানে কাছেই ছোট একটা মসজিদ আছে; ওখানে যাই। আমরা কেউ জানতামও না, ভিতরে ছিল। ওখানে গেলাম, ওখানে নিরাপদে থাকলাম তিন চার দিন। আগে কারো জানা ছিল না। ওখানে গেল অন্য জামাত, তো এখানে পুলিশ তাড়ালো, আর ওখানে পুলিশ ওদের মসজিদে নিয়ে গেল। এটা ওদের খেয়াল ছিল না, কোন চিন্তার মধ্যেই নয়, নিয়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলা তার বন্দোবস্ত করেন। পেরেশানীও হয়, বন্দোবস্তও হয়।

সাহাবাদের এর থেকে অনেক বেশী হয়েছে, তুলনা করাই বেয়াদবি। কোথায় কি! আমরা যেহেতু দুর্বল, দু’তিনটা মসজিদ পরেই একটা বিশ্রামের জায়গা পেয়ে যাই। একবারও এখন পর্যন্ত সারারাত রাস্তায় থাকতে হয় নি। সারারাত কি বেশী রাতও থাকতে হয় নি, বড় জোর রাত এগারটা পর্যন্ত। তারপরেই কোন না কোন একটা বন্দোবস্ত হয়ে যায়।

[মজমা থেকে একজন বলল- কালকে তো দুইটা মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছে, একাধিক দিন এরকমও হয়েছে যে, আসরের পর থেকে নিয়ে ৫টা মসজিদ থেকেও বের করে দিয়েছে, তারপরেও থাকার জায়গা পাওয়া গেছে।]

একটু চিন্তা করে দেখি যে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কত নিয়ামতের মধ্যে রেখেছেন। গতকালকেই, মসজিদ থেকে বের হয়েছি ফুটপাতে, ঐ ফুটপাতের মধ্যে দেখলাম একজন মহিলা। লোকজন তো আছেই, তবুও এর মধ্যে একটু ডানে বায়ে তাকিয়ে, যখন ধারে কাছে কেউ নাই তো পেশাব করতে বা জরুরত সারবার জন্য ওখানে রাস্তার মধ্যে বসল। এক তো হল, রাস্তার মধ্যে তাকে তার জরুরত সারতে বসতে হচ্ছে, বিকল্প কোন জায়গা নাই। একজন মহিলা; এইভাবেই তার জীবন কাটছে। মাত্র জীবনে একদিন কিছুক্ষন ঠেলা পেলাম, আর এইভাবে আমাদের মত কত মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে! সোবহানবাগে এক বাসায় থাকতাম গভঃ কোয়ার্টারে, আমাদের বাসার সামনে দেখলাম ফুটপাতের মধ্যে একজন মহিলা ছোট এক বাচ্চা নিয়ে এসেছে। আস্তে আস্তে করে ঐ বাচ্চা বেশ বড় হয়ে গেল, ঐ ফুটপাতের মধ্যেই! একজন পুরুষ মানুষ যদি হয় তাও কোন কম ব্যাপার না, একজন মেয়ে মানুষ, পেশাব পায়খানাইবা কিভাবে করে! এই ফুটপাতের মধ্যেই তার বছরের পর বছর কেটে যায়। অনেক সময় বলে যে একটা মানবেতর জীবন, গরু ছাগলের জীবন। গরু ছাগলের এর চেয়ে অনেক ভাল বন্দোবস্ত আছে। ঢাকার বা গ্রামের গরুর তার নিজস্ব একটা থাকার জায়গা আছে। আছে কিনা? বেশুমার মানুষ; গরুর যে পরিমান অধিকার আছে কোন একটা জায়গায়, ঐ পরিমাণও তার নেই।

এরা আমাদের সমাজেরই লোক। এরাই যে আমার কাছে আছে, আর সেই তুলনায় যে আমাকে আল্লাহ তা’আলা কত নিয়ামতের মধ্যে রেখেছেন, এই বোধই নাই! বরং বড় বড় বাড়ির দিকে তাকাই আর হিংসা করি যে এরা এত বড় বাড়িতে থাকে, আমার এরকম নাই কেন? আর ফুটপাতে সে যে জীবন কাটিয়ে দিল, পেশাব করারও তার জায়গা নাই! আল্লাহ তা’আলা কত নিয়ামতের মধ্যে রেখেছেন একথা খেয়ালের মধ্যেই আসে না। তো এইসব জিনিস আমাকে এটাও উপলদ্ধি করায় যে, আল্লাহ তা’আলা কত নিয়ামতের মধ্যে রেখেছেন! মাত্র একটা রাত কিছুক্ষনের জন্য জায়গা পাচ্ছি না, তাতেই কত পেরেশানী, ঠিক কিনা?

তো আল্লাহ তা’আলা তৌফিক নসীব করুন, আরো চলতে থাকি। তো আমরা যারা চিল্লার জন্য গিয়েছিলাম, চিল্লা তো হয়ে গেছে কিন্তু আল্লাহ তা’আলা নতুন কিছু নিয়ামতের রাস্তা খুলেছেন। পেলাম যখন কিছু কিছু নিয়ে যাই। তো কারা আছি ইনশাআল্লাহ একটু সময় বাড়াবার জন্য তৈয়ার আছি? এই জামাতের সাথে থাকবো, একদিন হোক, দুইদিন হোক, চারদিন হোক, পাঁচদিন হোক! কারা তৈয়ার আছি ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তা’আলার এই খাস নিয়ামত থেকে কিছু ভাগ নেওয়ার জন্য? আল্লাহ তা’আলা রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন, এরকম সুযোগ পাওয়া যায়না। আল্লাহর পথে গলা ধাক্কা খাওয়া, বের করে দেবে- এরকম সুযোগ ছিল নাকি?

এগুলো তো বিরল সুযোগ, আল্লাহ তা’আলা সাধারণত খাস বান্দা ছাড়া দেন না। আমরা কোন উপায়ে পেয়ে গেলাম।পেয়েছি যখন, ভাল করে ধরি, ফায়দা নিই, আরো দুইদিন চারদিন থাকি, ইনশাআল্লাহ বহুত ফায়দা হবে।

এক তো হল যে এসেছি ঠিক, এটা জানতাম না, গায়ের উপর পড়ে গেল। সামনে যে দু’চার দিন আরো থাকবো, ঐটা নিজে থেকে আগ্রহ করে নিই। ঐটার আবার নিয়ামত আলাদা। এক হল ঠেকায় পড়ে, আরেক হল নিজে আগ্রহ করে। দুজন মসজিদে ঢুকল। একজন মসজিদে ঢুকল নামায পড়ার জন্য, আরেকজন মসজিদে ঢুকল কুকুরের তাড়া খেয়ে। তো দুজন সমান নয়। গতদিনেরটা ছিল কুকুরের তাড়া খেয়ে। এখন সামনে যেটা হবে- নিজ আগ্রহে। আল্লাহ তা’আলা তাতে আলাদা ফায়দা দেবেন। কে কতদিনের জন্য তৈরি আছি ইনশাআল্লাহ? যতটুকু যার হিম্মত হয়; ১ দিন হোক আর ৫ দিন হোক আর ২ দিন হোক।

কিছু কিছু আছে যে মাজুরি আছে; চাকরি-বাকরি ইত্যাদি আছে। যাদের ওরকম এমন কোন শক্ত মাজুরি নয়, হিম্মত করতে পারি দুইদিন পরে গেলাম, চারদিন পড়ে গেলাম। হিম্মত করি, অল্পটুকু হলেও। মন যখন বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায় তখন একদিনের দাম’ই চিল্লার চেয়ে বেশী। মন তৈরি ছিল তো চিল্লা চলে গেছে, আর মন চাচ্ছে না, ঐ একদিনই চিল্লার চেয়ে বেশী।

খলীফা হারুনুর রশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করলেন, নিজের ব্যাপারে খুব ভয় লেগেছে। আল্লাহওয়ালা ছিলেন, আল্লাহওয়ালারা আল্লাহকে ভয় করেন। বাদশাহ ছিলেন, বাদশাহদের আবার ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় বেশী, সুযোগ বেশী। মুয়াবিয়া রাযিআল্লাহু আনহুর একটা কথা, “রাজা বাদশাহদেরকে ভয় কর, তাদের রাগ বাচ্চাদের মত আর থাবা বাঘের মত”। বাচ্চা ছোট-খাট জিনিসেই রেগে যায় আর রেগে তার মাকে চড় মারে। কিন্তু এইটুকু হাত দিয়ে চড় মারে, মাও ঐ হাতে  চুমা খায়। ব্যাথাও লাগেনা কিছুই লাগে না, ভালই লাগে। লাথি মারে- মা আদর করে। কিন্তু সে যদি ওরকম যে, বাঘের মত যদি শক্তি হয় আর আর বাচ্চার মত রাগ হয় তো মহা মুসীবত! বড় আজীব মিছাল দিয়েছেন, রাজা বাদশাহদেরকে ভয় কর, এদের রাগ বাচ্চাদের মত, থাবা বাঘের মত। ধ্বংস করে দেবে।

তো সেই হিসেবে হারুনুর রশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে বাদশাহও ছিলেন, ভুল ত্রুটি হতে পারে। আল্লাহওয়ালা ছিলেন, ভয় লেগেছে। তো ভয়ের সময় ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার ||||নাজাতের কোন উপায় আছে নাকি? মনে হচ্ছে আমি তো ধ্বংস হয়ে গেলাম! ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনি কি কখনো আল্লাহর ভয়ে নিজের মনের উল্টো কিছু করেছেন? চিন্তা করলেন, হ্যা তাতো করেছি। বললেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার নাজাত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা আছে-

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى

فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

‘আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে যে ভয় করলো, আর মনের চাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখলো- তার ঠিকানা জান্নাত’

ঐ যে বাড়ি যেতে মন চাচ্ছে, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা ছেড়ে দিলাম। বাড়িতে জানিয়েছি আসব, তারা অপেক্ষা করছে। তো ঐ যে মনের বিরুদ্ধে একটা কাজ আল্লাহর ওয়াস্তে, বলা যায় না আল্লাহ তা’আলা কখন কোনটাকে কবুল করেন। তো হিম্মত করতে পারি ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তা’আলা বহুত ফায়দা দেবেন।

এই যে এতক্ষন বললাম যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের অভিজ্ঞতার কিছুটা কিছু বুঝতে পারলাম। যদি বুঝতেই পারলাম এত বড় জিনিস, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের- ভাল করে বুঝার চেষ্টা করি। আর দু’চার দিন চললে তাতেও কিছুটা বুঝতে পারব।

একদিনও যদি হয়, যার যেরকম অবস্থা। সদকা খয়রাত যেরকম করে, একজনের কাছে আছে এক টাকা, সে এক টাকা দেয়। আরেকজনের কাছে দশ টাকা আছে, সে দশ টাকা দেয়। কারো কাছে বেশী, কারো কাছে কম। সময়ের ব্যাপারেও ওরকম, কারো কাছে বেশী কারো কাছে কম। তো ঐ যে, একজন অনেক টাকা দিল, আরেকজন দিল এক টাকা, আল্লাহর কাছে ঐ এক টাকার দামও আরেক জনের লাখো টাকার চেয়ে বেশী হতে পারে। কারন ঐ এক টাকা বহুত ঠেকার মধ্যে দিয়েছে। আর আরেকজন লাখ টাকা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য লাখ টাকা দেওয়াও সহজ।

সময়ের ব্যাপারেও ওরকম, সময় কখনো কখনো সহজ, আবার কখনো কখনো কঠিন। কঠিন অবস্থায় যদি অল্পও হয়, পরিমান তো বেশী নয়, আল্লাহ তা’আলা পরিমান দেখেন না, আল্লাহ তো কুরবানি দেখেন। 

একদিন দিলাম, আধাদিন দিলাম– পরিমানে ওগুলো বেশী কিছু নয়, কিন্তু  আধাদিনও আল্লাহর কাছে খুব কদর হতে পারে।

একটু চিন্তার মধ্যে রাখি, তারপর ইশরাকের সময় হয়ে গেছে, নামায পড়ার পর দু’আ করি। নামাযের সময়, নামাযের পরপর তো আল্লাহ তা’আলা মনকে খুলে দেন। দু’আ করি, আল্লাহ যদি করে দেন তাহলে দ্বীল তৈরি হয় যাবে।

অনেকদিন আগের কথা, কাকরাইল গিয়েছি, ওখানে একটা সফরের তাকাজায় পড়লাম, যেতে হবে। কোথায় তা ভুলে গেছি, দেশের বাইরেও হতে পারে, মনে নেই। তখন আমি বললাম সম্ভব নয়, ছুটি ইত্যাদির মাসলা আছে। এসে চিন্তা করলাম, পরে মনে হল সম্ভব, তৈরি হয়ে গেলাম। অবস্থার কোন পরিবর্তন নয়, কিছুক্ষন আগে মনে হল অসম্ভব আর কিছুক্ষন পরে মনে হল সম্ভব। তো মনে হওয়ার ব্যাপার, সেজন্যে নিজের উপর মেহনত করি। এখন মনে হচ্ছে অসম্ভব, মুশকিল, যদি নিজের মনের উপর নিজে মেহনত করি তখন মনে হতে পারে সম্ভব। আর এর মধ্যে দু’আ করি, ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ?

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه

سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ اِلَيْكَ

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ  عَمَّا يَصِفُوْنَ وَ سَلَامٌ عَلٰى الْمُرْسَلِيْنَ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

৩ Comments

Leave A Reply