اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ نَسْتَعِيْنُهُ وَ نَسْتَغْفِرُهُ وَ نَعُوْذُ بِهِ مِنْ شُرُوْرِ اَنْفُسِنَا وَ مِنْ سَيِّئَاتِ اَعْمَالِنَا ، مَنْ يَهْدِ هِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَ مَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَاَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلٰهَ الَّا اللهُ وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَ رَسُوْلُهُ فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّه حَيَاةً طَيِّبًا وَ لَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَ حْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ وَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يٰا اَيُّهَا النَّاسُ قُوْلُوْا لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ تُفْلِحُوْنَ أَوْ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ
رُبَّ أَشْعَثَ مَدْفُوعٍ بِالْأَبْوَابِ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ
‘কিছু লোক এমন আছে- এলোমেলো চুল, ধুলামাখা শরীর, প্রত্যেক দরজা থেকে বিতারিত, আল্লাহর উপর যদি কোন কসম খেয়ে বসে, নিশ্চয় আল্লাহ ঐটা পুরা করবেন’।
দুনিয়াতে তার কোন কদরই নাই, দরজা থেকে বিতারিত আর সে এই কদরের পরওয়াও করে না। এলোমেলো চুল, ধুলামাখা শরীর। যে মানুষের কাছে কদরের পরওয়া করে সে তো চুল আঁচড়াত, ভাল জামাকাপড় পড়ত। এটার তার কাছে কোন মূল্যই নেই, আর সে এটা পায়ও না। যেখানে যায় তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, প্রত্যেক দরজা থেকে বিতারিত। আল্লাহর কাছে তার কদর এরকম যে যদি একটা কথা বলে ফেলে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় ঐটা পুরা করবেন।
হঠাৎ করে একসময় মুখ ফসকে বলে ফেলল, ‘আজকে বৃষ্টি হবে’। অথচ বৃষ্টি হওয়ার কোন কথা ছিল না। ধরা যাক, আল্লাহর পরিকল্পনাতে ঐ বৃষ্টি দেওয়ার কোন প্ল্যান ছিল না। ও যখন বলে ফেলেছে, এই হাদীস অনুযায়ী আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে ওর কথা মতই হবে। আল্লাহ তা’আলা বড় মেহেরবাণী করে আমাদের দ্বীন দিয়েছেন, দ্বীনের এই কাজ দিয়েছেন আর দ্বীনের এই কাজের জরিয়ায় হেদায়েতের পথ খুলেছেন, আল্লাহর কাছে মকবুল হওয়ার। আল্লাহর নিয়ম হল দুনিয়াকে দারুল আসবাব বানিয়েছেন। যা কিছু ঘটে আসবাবের মাধ্যমে। যেমনি ভাবে দুনিয়াবী জিনিস সববের মাধ্যমে হয়। আকাশ থেকে যেমন ধান পড়েনা, চাষ করে, ধান গাছ লাগায় তারপর ধান কাটে, আম গাছ লাগায় তারপর আম পায়। আসবাব এখতিয়ার করতে বলা হয়। তাবলীগের মধ্যে প্রচলিত কথা আছে, বিয়ে শাদী করে নাই কিন্তু সন্তানের জন্য দোয়া করে। উপযুক্ত আসবাব এখতিয়ার করতে হবে।
আসবাবী জগতের যেমন আসবাব আছে, রুহানী জগতেরও সেরকম আসবাব আছে। আল্লাহ তা’আলা কাউকে যে খাস মর্তবা দান করেন, সেই মর্তবার জন্য আল্লাহ তা’আলা আসবাব পয়দা করেন। বিনা আসবাবে যদি আল্লাহ তা’আলা বড় মর্তবা দিয়ে দিতেন, তবে তাঁর নেক বান্দাদের এত কষ্ট দেওয়াতেন না। মার খাওয়ার কষ্ট, বিতাড়িত হওয়ার কষ্ট, আপনজন হারাবার কষ্ট, বিভিন্ন ধরণের কষ্ট। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার নিয়ম হল, যাকে যেটা দেওয়ার ফায়সালা করেন যে তাকে ঐটা দিবেন, তার জন্য একটা উপযুক্ত যুক্তি তৈয়ার করে দিবেন।
আল্লাহ তা’আলাকে তো প্রশ্ন করা যায় না কিন্তু আল্লাহ তা’আলা নিজেই নিজেকে নিয়মের মধ্যে বাধ্য করেন। বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে যে-
وَجَبَ علىَّ
“আমার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়”।
আল্লাহ তা’আলা নিজেই নিজেকে বাধ্য করেন। আল্লাহর বিচারের মধ্যে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা নিজেই নিজেকে ন্যায় বিচার করতে বাধ্য করেন। আর ন্যায় যে করছেন তা আবার সবাইকে দেখাবেন। হাশরের ময়দানে সাক্ষী প্রমাণ হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলার জন্য সাক্ষী প্রমাণের কী দরকার ছিল? দুনিয়াতে একজন জজ সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে যে ঘটনাটা কী! আল্লাহ তা’আলা কি আসল ঘটনা জানেন না? সাক্ষীপ্রমান দিয়ে অনেক পরীক্ষা-টরীক্ষা করার পরে শেষ পর্যন্ত বুঝবেন আসল ঘটনাটা কী! তারপর সেই হিসেবে ফায়সালা দিবেন! আল্লাহ তা’আলা সব জানেন কিন্তু আল্লাহ তা’আলা নিয়ম অনুযায়ী করেন। সাক্ষী প্রমাণ এই জন্য হাযির করেন যাতে অন্তত মানুষের মনে এইকথা না আসে যে আমাকে কেন জাহান্নামে দেওয়া হল আর ওকে কেন জান্নাতে দেওয়া হল? তার আগেই সব সাক্ষী প্রমাণ দিয়ে এমন অবস্থা তৈরি হবে যে সে নিজেই নিজের ওপরে এই ফায়সালা করতে বাধ্য হবে।
হাশরের ময়দান সম্পর্কে এই কথা বলা হয়েছে,-
كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا
“আজকে তোমার নফসই বা তুমি নিজেই হিসাবের জন্য যথেষ্ট”।
এত বেশি সাক্ষী প্রমাণ হাযির করা হবে আর এত নিখুঁত যে, ওর হাতে যদি সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়া হত, সে নিজেই বলতে বাধ্য হত যে- আমাকে জাহান্নামে দাও। সাক্ষী প্রমাণ তাকে বাধ্য করে ফেলছে; তুমি নিজেই যথেষ্ট। সে’ই দেখতে পাচ্ছে যে এটাই শুদ্ধ, এটাই উচিত। আমি নিজে থেকে এমন অবস্থায় পড়েছি যে আমার আর কোন বিকল্প নাই।
আল্লাহ তা’আলা তাঁর নেক বান্দাদের যে উপরের মর্যাদায় উঠান তার জন্যও সাক্ষী প্রমাণ রাখবেন। বিভিন্ন হালাত দিবেন- তার মধ্যে অনেক বড় একটা হল দুনিয়াতে যে আল্লাহর জন্য কষ্ট সহ্য করেছে। নবীদের কষ্টের একটা বড় অংশ হল মানুষের সামনে অপদস্থ হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছিলেন। ঐ জামানায় বড় কদর ছিল। আর ঐদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় থুথু ফেলছে। চুড়ান্ত মাত্রায় তাঁকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, অপমানিত করা হচ্ছে। থুথু ফেলাটা কোন শারীরিক কষ্ট নয়, কিন্তু চুড়ান্তভাবে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে অন্য লোকের সামনে। চুপ করে সব সহ্য করতেন। সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে সম্মানের মর্যাদা যে আল্লাহ তা’আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করলেন ‘মাকামে মাহমুদ’; সেই সম্মানের মর্তবা দান করবার জন্য তার বিপরীত লাঞ্ছনার অবস্থায় ফেলেও ঐটার জন্য মুস্তায়িদ বানাচ্ছেন। যে এত লাঞ্ছনা সহ্য করেছেন, এই এত সম্মানের জায়গা তাঁর জন্যই।
আল্লাহ তা’আলা কিছু নেক বান্দাদের কথা বলছেন; এলোমেলো চুল, ধুলা মাখা শরীর, প্রত্যেক দরজা থেকে বিতাড়িত। কিন্তু আল্লাহর কাছে তার মর্তবা এরকম, ও যদি একটা কথা বলে দেয় তাহলে সেটাই হবে। এটা এভাবে বলা যেতে পারে, দুনিয়াবী ব্যাপারে অনেক সময় যে সুপারিশ করে; এক ধরণের সুপারিশ হল যে উনার সুপারিশ কবুল করা হয়, আর আরেক ধরণের সুপারিশ হল যার সুপারিশ তো সুপারিশ নয় যেন আদেশ; অমান্য করার প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কোন কোন নেক বান্দাকে এমন মর্তবা দান করেন যে ওর কথা কোন সুপারিশ নয়, ওটা ফাইনাল। ও যখন বলেছে, আমার আর বলবার কিছু নাই।
উমর রাযিআল্লাহু আনহু নদীকে আদেশ দিলেন- প্রবাহিত হও। প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করা যে, “ইয়া আল্লাহ তুমি নদী প্রবাহিত কর”। কিন্তু না করে নদীকে সরাসরি বললেন। আল্লাহ তা’আলা উনাকে এমন মর্তবা দান করেছেন, আমার যে রাজ্য আছে, আমার রাজ্যে কিছু করবার দরকার হলে আমার মাধ্যমে যাওয়ার দরকার নাই। কখনও কখনও এরকম হয়। মনে করা যাক একজন অফিসারের বেগম সাহেবা ঐ অফিসারের পিএস-কে ফোন করে বললেন যে, এটা এটা কর। অনেক সময় পিএস ঘরের সাথেও সম্পর্কিত থাকে। তো পিএস যদি বলে- “ঠিক আছে স্যারকে জিজ্ঞেস করি”; তো চাকরিই গেল! ঐ একটা কথা ওর চাকরি চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আইনগত ভাবে বড় শুদ্ধ কথা। ওর তো স্যারকে জিজ্ঞেস করেই কাজ করতে হয়। কিন্তু বেগম সাহেবার কথার প্রেক্ষিতে যদি বলে ‘স্যারকে জিজ্ঞেস করে করি‘ তাহলে চাকরিই গেল! ওর বলতে হবে- ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ‘। এটাই তাকে করতে হবে। আর হাক্বীকত হল- স্যারও তার অধীন। স্যারেরও কোন অধিকার নাই এখানে কোন দ্বিমত করার।
আল্লাহ তা’আলা বড় মেহেরবানী করে আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন। এই দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা যে হেদায়াত খুলবেন; –
لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا
হেদায়াতের পথসমূহ যে আল্লাহ তা’আলা খুলবেন; হেদায়াতের পথসমূহ খুলবার জন্য আল্লাহ তা’আলা হেদায়াতের আসবাবও খুলবেন। বান্দাকে বড় মর্তবা আল্লাহ তা’আলা দান করবেন, সেই বড় মর্তবার জন্য বড় মর্তবার আসবাব সহ আল্লাহ তা’আলা দান করবেন।
আল্লাহ তা’আলা বড় মেহেরবানী করে আমাদের দ্বীনের এই কাজ দিয়েছেন। এই কাজের মাধ্যমে আমরা বড় হেদায়াত আশা করি, বড় মর্তবা আশা করি। সেই মর্তবা আল্লাহ তা’আলা যে দেবেন, সেই মর্তবার আসবাবও আল্লাহ তা’আলা দেবেন। সেই আসবাব যদি সামনে আসে, আশা করা ইনশাআল্লাহ বড় মর্তবা আল্লাহ তা’আলা দান করবেন। আল্লাহ আমাদের তৌফিক নসিব করুন।
আল্লাহর কাছে আমরা আশাবাদী হই। এটাও শরীয়তের বড় একটা আদেশ যে, আল্লাহর কাছে তোমরা আশাবাদী হও। প্রত্যেক অবস্থায় যেন আমরা আল্লাহর কাছে বড় বড় আশা করা শিখি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক নসিব করুক, আমীন। ইনশাআল্লাহ প্রত্যেক অবস্থা যখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন বহুত বড় দরজা খুলবার জন্য আল্লাহ তা’আলা ঐ অবস্থা নাযিল করেন। ঠিক আছেনা ইনশাআল্লাহ!
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ اِلَيْكَ
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَ سَلَامٌ عَلٰى الْمُرْسَلِيْنَ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ