বুধবার, জুন ২৫

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ نَسْتَعِيْنُهُ وَ نَسْتَغْفِرُهُ   وَ نَعُوْذُ بِهِ مِنْ  شُرُوْرِ  اَنْفُسِنَا  وَ مِنْ سَيِّئَاتِ  اَعْمَالِنَا ، مَنْ يَهْدِ هِ  اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ  وَ مَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ   وَاَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلٰهَ الَّا اللهُ  وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا  عَبْدُه وَ رَسُوْلُهُ ۝ فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ۝   بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ۝ مَنْ  عَمِلَ صَالِحًا مِنْذَكَرٍ اَوْ  اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّه حَيَاةً  طَيِّبًا وَ لَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَ حْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ۝ وَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ   يٰا اَيُّهَا النَّاسُ قُوْلُوْا لَا اِلٰهَ  اِلَّا اللهُ  تُفْلِحُوْنَ ۝  أَوْ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ  وَ السَّلَامُ۝

দ্বীনকে, আল্লাহর হকুমকে বুঝা আর বুঝে করা। আর না বুঝে যদি করে, তো ঐটা ঠিক মানুষের মত করা হল না। হাইওয়ান বা জানোয়ারের ব্যাপারেও শরীয়তের আহকাম আছে। যেমন পোষা শিকারী কুকুর, শিকারী পাখি। শিকারী পাখি যেগুলো শিকার করা শিখেছে, এদেরকে মু’আল্লাম বা ইলম প্রাপ্ত বলা হয়।

تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللَّهُ

“ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের যে ইলম দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে ইলম দাও”

শিকারী কুকুর শিকার করলে, ও যে শিকার করেছে ঐটা হালাল। আর যেটা শিকারী কুকুর নয়, ঐটার শিকার হালাল নয়। শিকারী মানে যার ইলম আছে। কিন্তু এই যে ইলম দিয়ে সে শিকার করলো, এর জন্য ঐ কুকুর কিন্তু কোন সওয়াব পাবে না। আর এজন্য সে জান্নাতেও যাবে না। যদিও সে ইলম নিয়েছে আর সেই ইলমের ওপর আমলও করেছে, মালিকের কথা মেনেছে। আর তাকে মু‘আল্লাম বা ইলম প্রাপ্ত বলা হয়। মানুষ যদি ইলমের ওপর আমল করে তা হলে তার জন্য সে সওয়াব পায়। কুকুর ইলমের ওপর আমল করলো ঠিকই, কিন্তু সওয়াব পেল না। একটা বড় পার্থক্য, মূল পার্থক্য; কুকুর ইলম অর্জন করেছে, একটা জিনিস শিখেছে কিন্তু না বুঝে। তার সমঝ-বুঝ কিছু নাই, ভাল-মন্দ বুঝে না। আর মানুষ বুঝে করে। আমলের বুঝার অংশ, ওটা করার অংশের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ

নিয়ত দিয়ে আমল বিচার করা হয়। নিয়ত করতে হলে তাকে বুঝতে হবে। ফজরের নামাজ পড়ছি, যদি না বুঝি তো কী নিয়ত করবো! এজন্য বুঝতে হবে। ইখলাস- ঐটাও বুঝার সাথে সম্পর্কিত। যদি না বুঝে তাহলে ইখলাসও করতে পারবেনা,নিয়তও হবেনা।

তো দ্বীনের সব হুকুম আক্বীল, বালেগ মানুষের উপর। আর তার আক্বলকে ব্যবহার করা। কুরআন শরীফের এই ধরনের শব্দ আল্লাহ তা’আলা বহুবার বলেছেন,

أَفَلاَ تَعْقِلُونَ

“তোমরা কি বুঝনা?”

বুঝার উপর আল্লাহ তা’আলা খুব গুরুত্বারোপ করেছেন। বুঝে কর, অন্ধের মত নয়, না বুঝে নয়। তো আল্লাহ তা’আলা মানুষকে হাত-পা-চোখ-কান এগুলো দিয়েছেন। এই সবগুলোর চেয়ে বেশি মূল্যবান হচ্ছে তার দেমাগ, দ্বীল-দেমাগ। যদি একজন মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে যায়, জীবন তবুও চলে। কান নষ্ট হয়ে যায়, জীবন চলে। কিন্তু দেমাগ নষ্ট হয়ে গেলে জীবন চলে না। যদি কারো চোখ নষ্ট হয়, কান নষ্ট হয়ে যায়, তার উপরও শরীয়তের আহকাম প্রযোজ্য, সে দ্বীনের উপর চলতে পারে। কিন্তু যদি দেমাগ নষ্ট হয়ে যায়, তার উপর শরীয়তের আহকাম আর চলবে না। তো বুঝে করা- এটা অত্যন্ত জরুরী জিনিস। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমরা অনেক সময় দ্বীনের মতবাদ শুনেছি যে, ‘মানো’। মানা, মানার কথা এতো বেশি শুনেছি যে, এটা ধারণা হয়ে গেছে যে, ‘না বুঝেই মানতে হবে’। না বুঝে মানা নয়। মানা ঠিকই, কিন্তু বুঝে মানা। না বুঝে মানা নয়। তো না বুঝে মানার কথা এলো কেমন করে? এটা এসে গেছে কারণ, নিজ স্বার্থে মানুষ অন্যদেরকে বোকা বানাতে চায়। যারা অসৎ, ঠগ তারা অন্যদেরকে বোকা বানাতে চায়। যেমন, একজন মানুষ ব্যবসায় আরেকজনকে ঠকায়। একটা জিনিস বিক্রি করছে যে জিনিস ওর কোন কাজে লাগবে না। গরমের মৌসুমে একজন খুব দামী একটা উলের সুয়েটার বিক্রি করলো। গরমের মৌসুমে এটা কোন কাজের জিনিস না। যে খুব চালাক বিক্রেতা, সে ক্রেতাকে ভাবতে-বুঝতে দেয় না। এমন কথার মধ্যে ব্যস্ত করে দিবে যে, ক্রেতাকে এটা চিন্তা করতে দিবে না যে, এই সুয়েটার দিয়ে আমি করবো কী?

মানুষ তার নিজ স্বার্থে অন্যের বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয়। ব্যবসাতে এটা বেশি করে, পলিটিকসেও এটা করে। পলিটিকসে সে নিজে মন্ত্রি-এমপি হবে, এই জন্যে মেহনত করায় পাবলিককে দিয়ে। ঐ পাবলিকের কোন স্বার্থ নেই। সে হয়তো তার জানও দিয়ে দিবে, কিন্তু নিজের কোন স্বার্থ নেই, স্বার্থ তো নেতার। কিন্তু নেতা এই কথা পাবলিককে বুঝতে দেয়না। সে এমনভাবে কথা বলে যেন তারই (পাবলিকের) স্বার্থ। আর তার বুদ্ধিতে কাজ করতে দেয় না। বর্তমান দুনিয়াতে যত আর্মি আছে, সেগুলোতে সিপাহীদের ভাবতে দেয় না। এদেরকে বোকা বানিয়ে রাখে, না বুঝে করে। আর আর্মিতে ঢুকার পরেই প্রথম এক বছর এমন ধরনের ট্রেনিং দেয় যে; যা বলে, অর্ডার দেয় ঐটাই করতে হয়। না বুঝেই। এজন্য বলা হয় যে সিপাহীরা বোকা হয়, তাদের বুদ্ধি পায়ের মধ্যে।

দ্বীন এরকম নয়। দ্বীন হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি বুঝে কাজ করবে, না বুঝে একজনও নয়। কিন্তু যাহেরী জগতে দেখা যায় যে, অন্যান্য বে-দ্বীনী যত ধর্ম আছে, যেমন হিন্দু ধর্ম, হিন্দুদের বই আছে, ধর্মগ্রন্থ বেদ, ব্রাহ্মণরা এটা পড়ে আর পড়তে পারে। সাধারন হিন্দুরা, নিচের বর্ণের যারা যেমন নমশূদ্ররা, তারা এটা পড়তে পারে না আর তার জন্য এটা পড়া নিষেধ। মারাত্মক ভাবে নিষেধ! এগুলো ব্রাহ্মণরা করেছে তাদের নিজ সুবিধার জন্য। একজন নমশুদ্র যদি কান পেতে শুনে যখন একজন বাহ্মণ পড়ছে, তাহলে এটা তার জন্য অপরাধ, আর তার শাস্তি হচ্ছে তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া। কেন শুনল! তো নিজে তো পড়তে পারবেই না, শুনতেও পারবে না। এর মোকাবেলায় ইসলামে একজন সাধারন থেকে সাধারন মুসলমান, সে নামায পড়ার সময় তাকেই সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা পড়তে হবে। আর পড়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল বুঝে পড়া। তাহলে বেশী সওয়াব, বেশী ফায়দা। তো সাধারন থেকে সাধারণ একজন মানুষ; তারও দায়িত্ব সে যেন বুঝে যে আল্লাহ আমাকে কী বলেছেন। এর মোকাবেলায় হিন্দুরা; তাদের জন্য বুঝা নিষেধ, যদি বুঝার চেষ্টা করে তবে কঠোর শাস্তি। খ্রিস্টানদেরও ওরকম, শাস্তি নয় কিন্তু ক্যাথলিক যারা আছে তাদের বাইবেল হচ্ছে ল্যাটিন ভাষায়, সাধারণ মানুষ এগুলো পড়েও না, বুঝেও না, তাদের দরকারও নাই।

বিদ’আতিরা এরকম করে, যত বিদ’আতি পীররা আছে, বিদ’আতি পীরদের বড় শত্রু হচ্ছে মাদরাসা। কোন বিদ’আতি পীর তার এরিয়াতে মাদরাসা করতে দেবে না। নানান গন্ডগোল পাকাবে। কারন মাদরাসা যদি হয় আর মানুষজন যদি ইলম পেয়ে যায়, তাহলে ওর ব্যবসা চলবে না, মানুষ ওকে গরু-ছাগল দেবে না। এক জায়গায় তাফসীর ছিল, কথা প্রসঙ্গে এল আগের জামানায় একজন পীর খোঁজছেন, তো উনি একটু রসিকতা করে বললেন, বর্তমান যমানায় যদি কেউ পীর খোঁজে তো দেখবে যে কোথায় গরুর লাইন! গরুর লেজ ধরে ধরে গিয়ে পীর পাবে! আগের যমানায় তো এরকম ছিল না যে গরুর লেজ ধরে পীর খোঁজা, গরুর লেজ ধরে খোঁজলে গরুর পীর পাবে, মানুষের পীর কীভাবে পাবে?

এই যে গরু দিচ্ছে, যে পীরকে টাকা দিচ্ছে, তার নিজের মা বাপের হয়ত টাকার দরকার আছে, হয়ত ওর খালা ফুফুর চিকিৎসার টাকা নাই, নিজের ভাই বোনের টাকা দরকার আছে, এদেরকে না দিয়ে দিচ্ছে ঐ পীরকে যার কোটি কোটি টাকা আছেও। তার আহলে হক কে বাদ দিয়ে, তার রক্তের সম্পর্ক, তার প্রতিবেশী এদেরকে বাদ দিয়ে ঐ পীরকে টাকা দিচ্ছে। ও যদি ইলমওয়ালা হয় তাহলে ও তো দেবে না। ইলম না থাকলে দেবে। সেজন্য ওদেরকে বোকা বানায় যাতে তার কোন বুদ্ধি কাজ না করে, মাসলা মাসায়েল কাজ না করে। সিজদা করে, আমাদের দেশে অসংখ্য পীর আছে যাদেরকে মুরিদরা গিয়ে সিজদা করে। সেই মুরিদ যদি একটু ইলম পেয়ে যায় তাহলে আর সিজদা করবে না। আর সিজদা যদি না করে, তাহলে পরে আর টাকাও দেবে না। এজন্য তাকে জেহালতের মধ্যে রাখতে চায়, ‘এগুলো তোমরা বুঝবে না, বুঝার কাজ এগুলো আমার, তোমার জান্নাতে যাওয়া- এটা আমার দায়িত্ব’।

নিজ স্বার্থে মানুষ অন্যকে নির্বোধ বানায়। আর এর মোকাবেলায় আল্লাহ তা’আলা দ্বীন দিয়েছেন যে, প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব সে যেন তার সাধ্যমত দ্বীন কে বুঝে, বুঝার চেষ্টা করে। সাহাবাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তৈয়ার করেছেন যে বুঝে চল, আর চলার দরকার। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا

“তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক বা মযলুম হোক”

সাহাবারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মানতেন ঠিকই, কিন্তু বুঝে মানতেন, বুঝার চেষ্টা করতেন। সাহাবারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার ভাই যদি মাযলুম হয় তাকে সাহায্য করব- এটাতো বুঝে আসে, কিন্তু আমার ভাই যদি যালিম হয় তাহলে কেমন করে সাহায্য করব? সে তো অন্যায় কাজ করছে, যালিম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বুঝিয়ে দিলেন যে, তার সাহায্য মানে হল তাকে যুলুম থেকে বাধা দেওয়া, এটা হল সাহায্য। তখন সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ এবার বুঝতে পেরেছি।

তো সাহাবারা বুঝে করতেন, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা কাজ করলে তারপরেও চিন্তা করতেন। বদরের যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় অবস্থান নিলেন যে আমরা এই জায়গায় থাকবো। একজন সাহাবী, হুব্বাব ইবনে মুংজির রাদিআল্লাহু আনহু, তিনি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনি যে এটা বলছেন এটা কি আল্লাহর হুকুমে বলছেন নাকি নিজ বিবেচনায় বলেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজ বিবেচনায়। ঐ সাহাবী বললেন, তাহলে আমারও একটা রায় আছে। কী? আমরা এখানে না থেকে ওখানে অবস্থান করি, একটু সামনে। ওখানে থাকলে পানি আমাদের দখলে থাকবে, আর এখানে পায়ের নিচে পাথর, ওখানে পায়ের নিচে মাটি থাকবে। বড় কথা হল পানি। দ্বিতীয়তঃ ওখানে চলাফেরাও সুবিধা, এখানে পাথরের কারনে চলাফেরায় কষ্ট হয়, তুলনামূলক ভাবে মাটিতে চলাফেরা সহজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা মানলেন এবং অবস্থান পরিবর্তন করলেন।

এরকম নয় যে ‘আল্লাহর নবী বলেছেন, আর আমরা কিছু ভাববো না’, তা নয়। একবার সফরে খাবার শেষ হয়ে গেছে, কায়েস ইবনে সা’দ ইবনে উবাদা রাদিআল্লাহু আনহু সাথীদের কাছ থেকে বাকীতে উট ক্রয় করছেন আর জবাই করে খাওয়াচ্ছেন। পরে মদিনাতে গিয়ে দাম দেবেন। জবাই করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন, আর রওয়ানা হয়েছেন জবাই করার জন্য। উমর রাদিআল্লাহু আনহু দেখলেন, দেখে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন, উট জবাই করার জন্য। উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, উট জবাই করে যদি আমরা খেয়ে ফেলি তাহলে মদিনাতে ফিরে যাব কেমন করে? উট আমাদের বাহন, সওয়ারি। তিনি জবাব দিলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আবার চল। দুজন আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, যদি আমরা উটগুলো খেয়ে ফেলি তাহলে মদিনায় ফিরে যাব কেমন করে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেনে নিলেন। অথচ অনুমতি দেওয়া হয়ে গেছে। উমর রাদিআল্লাহু আনহুর কথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পরিবর্তন করলেন।

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতা মোবারক দিলেন। আর দিয়ে বললেন বাইরে গিয়ে ঘোষণা কর “যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে জান্নাতে যাবে”। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু গেলেন, প্রথমেই দেখা হল উমর রাদিআল্লাহু আনহুর সাথে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুতা মোবারক। কী কথা? ‘যে ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে জান্নাতে যাবে’। উমর রাদিআল্লাহু আনহু উনার বুকের উপর ধাক্কা দিয়ে বললেন যাও, ফিরে যাও। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু ফিরে গেলেন, গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে কেঁদে দিলেন। মনে কষ্ট পেয়েছেন। পেছন পেছন উমর রাদিআল্লাহু আনহু এসেছেন। এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি পাঠিয়েছেন নাকি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, এরকম করবেন না, এতে মানুষ আমল করা ছেড়ে দেবে। বলবে যে ‘জান্নাতি তো হয়ে গেছি আর কিছু লাগবে না’, আমল করা ছেড়ে দেবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা মেনে নিলেন। এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা কথা বলছেন, সাহাবারা এর বিপরীত আরেকটা কথা বলছেন, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা মেনে নিচ্ছেন। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নারায হচ্ছেন তা নয়, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা চাচ্ছেন যে, তারাও ফিকির করুক। কারন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে যাবেন, আর সাহাবারা যদি ফিকিরমন্দের জামাত না হয় তাহলে দ্বীন থেমে যাবে।

আজকাল যেরকম, কেউ কিডনি ট্রান্সফার করবে। একজনের কিডনি আরেকজন লাগাবে। তো মুফতি কে জিজ্ঞেস করলো যে এটা জায়েয কিনা? মুফতিকে এই ফতোয়া দিতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি। এটা ছিলও না। মুফতি ফতোয়া দেবেন, তো ফতোয়া কোত্থেকে দেবেন? উনার নিজ বুদ্ধি বিবেচনা থেকে দেবেন। তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বুদ্ধি বিবেচনা করা তখন থেকেই শিখিয়েছেন। যাতে দ্বীন অচল হয়ে না যায়।

সাহাবারা মিশরে যখন গেলেন তো মহিষ পেলেন। আরবে মহিষ নাই, মক্কা মদিনা কোথাও মহিষ নাই কিন্তু মিশরে আছে। আর কুরআন শরীফে, হাদিস শরীফে কোথাও মহিষের কোন উল্লেখ নাই। তো সাহাবারা মিশরে গিয়ে মহিষ পাওয়ার সাথে সাথে এই প্রশ্ন উঠল যে এর দুধ, গোশত হালাল না হারাম? এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, ফতোয়া দিতে হবে। কিন্তু কুরআন শরীফেও উল্লেখ নাই, হাদিস শরীফেও উল্লেখ নাই কোত্থেকে ফতোয়া দেবেন? নিজ বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করে। তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বুদ্ধি বিবেচনা করা- এটা খুব গুরুত্ব দিয়ে শিখিয়েছেন। আর এত বেশী শিখিয়েছেন যে, একসময় আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিআল্লাহু আনহু এই দু’জনকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দুজন যদি কোন বিষয়ে একমত হয়ে যাও তাহলে আমি তোমাদের ভিন্নমত পোষণ করব না।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন, এই দ্বীনের প্রত্যেক ব্যক্তি যেন তার সাধ্যমত চিন্তা ফিকির করনেওয়ালা হয়। মাশোয়ারার মধ্যে এই কথা হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও বলতেন যে, “রায় দেনা, রায় লেনা, রায় নিকালনা”। কিছু নতুন সাথি আছে, তারা চুপ করে বসে থাকে, নিজে রায় দেয়ও না আর মনে করে ‘মুরব্বীরা যা ভাল মনে করে’। না, তাকেও চিন্তা করতে অভ্যস্ত করতে হবে। রায় নিকালনা মানে বলতে চায় না কিন্তু জিজ্ঞেস করে করে বের করা, সে যেন রায় দেয়। কারন, রায় যদি না দেয় তাহলে সে চিন্তা ফিকির করবে না। এই দ্বীন কে তিজারত বলা হয়েছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

এই তিজারতের মধ্যে কোন ব্যক্তি ‘কর্মচারী’ নয়, প্রত্যেক মুসলমান- সে ‘পার্টনার’। কর্মচারী আর পার্টনারের মধ্যে বিরাট পার্থক্য। কর্মচারী আদেশ পালন করে, কিন্তু কোন দায়িত্ব নেয় না। আর যে পার্টনার বা মালিক; সে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়।

টঙ্গীর ইজতেমার পরে প্রত্যেক বছর হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থাকতেন, যাওয়ার আগে কাকরাইল ওয়ালাদেরকে কিছু কথা বলতেন। কয়েক বছর আগে একবার, হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিগত কয়েক বছরের জমা করা কথাগুলো পড়ে শোনানো হল। বেশীরভাগ কথা এই জিম্মাদারির উপর ছিলো। যেমন একবার হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বয়ান আরম্ভই করলেন একথা দিয়ে, “ইয়ে কাম কিয়া হ্যায়”? নিজেই প্রশ্ন করলেন, আবার নিজেই উত্তর দিলেন- “এক জিম্মাদারি হ্যায়”। কর্মচারী কিন্তু জিম্মাদার নয়, কাজ করে ঠিকই, বেতন পায় কিন্তু জিম্মাদারি নেই। আর মালিক যে, সে জিম্মাদার, সে চিন্তা ফিকির করে। ভবিষ্যতের চিন্তা ফিকিরও করে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের দ্বীনের কাজ দিয়েছেন যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি সে যেন জিম্মাদারের মত কাজ করে, সে যত ছোটই হোক না কেন। সবাই সব কথা বুঝতে পারে না, কিন্তু বুঝার চেষ্টা যেন সবাই করে। যতটুকু পারে ততটুকু যেন সবাই বুঝে। মানুষের রায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। আমার রায় কারো সাথে মিলবে এটা কোন জরুরী না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেও অনেক সময় সাহাবাদের রায় মিলেনি। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারাজও হননি। রায় মিলে যাওয়া কোন জরুরী জিনিস নয়, কিন্তু সে যেন চিন্তা-ফিকির করে।

আমাদের নেসাবের কিতাবের মধ্যে আছে- আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়া হচ্ছে- চব্বিশ ঘন্টার চেয়ে কম সময়ে ইতেকাফ হয়না। আমরা কিন্তু পাঁচ মিনিটের ইতেকাফও করি। বলা হয় মসজিদে ঢুকে ইতেকাফের নিয়ত করলাম, যতক্ষণ মসজিদে থাকি। আমরা তো হানাফি। আমরা হানাফি মাযহাব মানি, আর ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়া হচ্ছে চব্বিশ ঘন্টার কম সময়ে ইতেকাফ হয়না; আর আমরা পাঁচ মিনিটেরও ইতেকাফ করি- ব্যাপারটা কেমন হল? ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়া হচ্ছে- অল্প সময়েরও ইতেকাফ হয়। ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির শাগরেদ। তো শাগরেদের ফতোয়া উস্তাদের ফতোয়ার চেয়ে ভিন্ন। মানুষ বলবে, ‘কত বড় বেয়াদব’! না, এটাই শিক্ষা। আর পরবর্তীতে হানাফী মাযহাবের উলামারা মূল আবূ হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়াকে গ্রহণ না করে তাঁর শাগরেদ মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়াকে গ্রহণ করেছেন, এটাই হানাফী ফতোয়া। আর তাঁরা এটা চেয়েছেন যে আমি এমন লোক তৈরী করে যাবো, যে আমার বদল হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়্যত আর এর আগের নবুয়্যতের মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হল যে, এর আগের নবীরা তাঁদের বদল তৈরী করে যাননি, আর এর দরকারও ছিল না। আল্লাহ তা’আলা পরবর্তীতে আরেক নবী পাঠাবেন, সেই নবী এসে কাজ করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ হওয়ার কারণে তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাঁর বদল তৈরী করে গেছেন, যে নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারে।

একজন নবী নতুন শরীয়ত নিয়ে আসেন। এই উম্মতের মধ্যে প্রায়ই নতুন শরীয়তের দরকার পড়ে। যেমন একটু আগে বললাম যে কিডনি ট্র্যান্সফার। একজনের কিডনি আরেকজন লাগাতে পারবে কিনা? রক্ত নিতে পারবে কিনা? রোযা রেখে ইনজেকশন দেওয়া জায়েজ হবে কিনা? ইত্যাদি বহু প্রচলন যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় ছিল না, এগুলো এখন আছে। তো যে ফতোয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেননি, সেই ফতোয়া এখন দিতে হচ্ছে। তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের মধ্যে থেকে এমন লোক তৈরী করে গেছেন যে, তারা যেন নতুন নতুন পরিস্থিতিতেও নিজেরা ফতোয়া দিতে পারে। আর এটা না হলে দ্বীন অচল হয়ে পড়বে। শর্ত হল- প্রত্যেকেই যেন ফিকিরবান হয়, বুঝে। রায় নাও মিলতে পারে। ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথেও তাঁর শাগরেদের রায় মিলেনি। এতে এটাকে বেয়াদবীও বলা হয় না, বিদ্রোহীও বলা হয় না, কোনটাই নয়।

তো দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ব হল বুঝে করা। এখন আমাদের কাছে নতুন নতুন সাথীরা আসবে, ‘কী ব্যাপার’? প্রথম কথা হল- ভাই, তুমি ব্যাপারটা আগে বুঝ। আমার কথা মানতে হবে এটা জরুরী নয়, কিন্তু বুঝ। না বুঝে যদি কর, তো এটা মুসলমানের মত হবে না। এটা ঐ নমশূদ্রদের মতই হল।

প্রথম কথা হল- বুঝ। বুঝতে গেলে প্রশ্ন করতে হয়। এখন যদি বলে যে, ‘প্রশ্ন করা বেয়াদবী’! না, এটা বেয়াদবী নয়। প্রশ্ন করতে হবে। সাহাবারা-সাহাবিয়ারা এসে এসে কত প্রশ্ন করেছেন যেগুলো মজলিসের মধ্যে করতে লজ্জা লাগে। একজন মহিলা এসে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে প্রশ্ন করেছেন যে, স্বামী-স্ত্রী মিলনে কোন অবস্থায় গোসল ফরয হয়? আর এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে তো বিস্তারিত কথা বলতে হয়। কিন্তু যিনি প্রশ্ন করেছেন তিনি এ কথা বললেন না যে, ‘লজ্জা লাগে, এই প্রশ্ন করবো না’। তিনি প্রশ্ন করেছেন, আর আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বিস্তারিত উত্তরও দিয়েছেন যে, এইটুকু হলে গোসল করতে হবে, আর এর চেয়ে কম হলে গোসল না করলেও চলবে।

প্রশ্ন করতে হবে। আর প্রশ্ন করতে গেলে অনেক সময় এরকম অনেক প্রশ্ন করতে হয় যেগুলো জাহেরীভাবে মনে হবে আদবের খেলাফ। কিন্তু প্রশ্ন যদি করে- এটা কোন আদবের খেলাফ নয়। ডাক্তার যদি রোগীর রোগকে বুঝতে চায়, তাহলে তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হয়। অনেকগুলো জিনিস রোগী বলতে চায় না। অন্যের কাছে বলবেও না, কিন্তু ডাক্তারের কাছে সে বলবে আর বলার দরকার। সেজন্য বুঝুক। আর বুঝতে হলে তো প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করার পরে তোমার দ্বীল যেটায় ইতমিনান হয় সেটার ওপর আমল করো। আল্লাহর উপর ভরসা করে নামাজ পড়ে, দোয়া করে……. (অস্পষ্ট)।

সাফ দ্বীলে যদি প্রশ্ন করে, তার কথা যদি ভুলও হয়, কিন্তু সে যেন বুঝার চেষ্টা করে। এরপরও যদি ভুল হয় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য…… (অস্পষ্ট)।

নির্জন কোন জায়গায় গেলাম, ইশার নামাজ পড়বো। কিবলা কোন দিকে বুঝতে পারছি না। আশেপাশে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। যাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম তারাও না জেনে কিবলার ভুল দিক দেখিয়ে দিল। তো কিবলা একদিকে আর নামাজ পড়ছি আরেকদিক ফিরে। কিন্তু আমার সাধ্যমত খোঁজ-খবর করেছি। তো খোঁজ-খবর করে তারপর যদি আমি ভুলদিকেও নামাজ পড়ি, আল্লাহ তা’আলা আমার নামাজকে কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ আমি আমার সাধ্যমত জানবার চেষ্টা করেছি, লোকজনকে জিজ্ঞাসাও করেছি। আর যদি আমি অপরিচিত কোন জায়গায় গিয়ে নামাজ ঠিকই কিবলার দিকেই ফিরে পড়লাম, কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা করলাম না। আর ভাবলাম জিজ্ঞাসা করার কী দরকার, পড়ে নিলেই হল! ‘পড়ে নিলেই হল’ এটা ভেবে কোন গুরুত্তই দিলাম না, নামাজ পড়লাম, ‘বাইচান্স’ কিবলার দিকেই হল, কিন্তু এটাকে আমি গুরুত্ত দিয়ে খোঁজ করলাম না। যদিও হয়ে গেছে বাইচান্স কিবলার দিকেই, এই নামাজ হবে না। কারন, কিবলার নিয়তই করিনি, খোঁজও করিনি। কিন্তু কিবলার উল্টু দিকে ফিরেও যদি কেউ পড়ে কিন্তু খোঁজ-খবর করে তারপর পড়েছে, তারটা ঠিক।

তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন, এই দ্বীন আমার কাছে দাবী করে আমি যেন বুঝার চেষ্টা করি। সাধ্যমত জিজ্ঞেস করে হোক, বুঝে হোক। তারপর রায় মিলতে পারে, না মিলতে পারে এটা কোন দোষারোপ করাও যাবে না। সেক্ষেত্রে যদি কেউ আল্লাহ তা’আলার পছন্দ নয়- সেটার উপরও যদি আমল করে, আল্লাহ তা’আলা ঐটাকেও কবুল করবেন।

বদরের কয়েদী যারা ছিলেন তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শ করে কয়েদীদেরকে মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। পরে কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল হল যে, এটা ঠিক হয়নি। আল্লাহ তা’আলার পছন্দনীয় ছিল এদেরকে কতল করা। কিন্তু যেহেতু পরামর্শ ইত্যাদি করে তারপর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা এটাকেই কবুল করলেন। তো আমরা সাধ্যমত বুঝার চেষ্টা করব, উলামাদের কাছে জিজ্ঞেস করব, আল্লাহ ওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করব, সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করব, তারপরে যদি ভুলও হয়, আল্লাহ তা’আলা  ইনশাআল্লাহ ঐটাকে কবুল করবেন। তো আমরা চিন্তা- ফিকির করি, নিজেও বুঝি, সাথীদেরকেও ফিকিরবান করি। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তৌফিক নসীব করুন।

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه 

سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ اِلَيْكَ

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ  عَمَّا يَصِفُوْنَ وَ سَلَامٌ عَلٰى الْمُرْسَلِيْنَ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

Leave A Reply