[মজমা থেকে প্রশ্নঃ অনেক সময় বড়রা বলে থাকে ইস্তেমায়ীয়াত ঠিক রাখার জন্য সর্বদা চেষ্টা করা, এজন্য হক কথাকেও অনেক সময় না বলা, যেন উম্মত জুড়ে থাকে এবং ফিতনা সৃষ্টি না হয়; এ কথাটি কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা রাখে?]
বড় কঠিন প্রশ্ন। ইস্তেমায়ীয়াত রক্ষা করা- এটা অত্যন্ত জরুরী; আবার ভুলের উপর যেন পরিচালিত না হই। সংশোধন পথ যেন শুদ্ধ হয় এইটাও জরুরী এবং খুবই জরুরী। এখন দুটো যখন একসাথে চালানো মুশকিল হয়, পরস্পর বিরোধ হয়, তখন ফয়সালা কোনটা করা? এসব ক্ষেত্রে তাত্বিক বিশ্লেষন সহজ নয় বরং আল্লাহওয়ালাদের জীবন ও সাহাবাদের সীরাতের দিকে তাকালে তাঁরা এরকম অবস্থায় কী করেছেন, তাঁদের পাক জীবন ও সীরাত থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ইস্তেমায়ীয়াতের কথা বলে চুপ থাকি, কিন্তু আসলে ইস্তেমায়ীয়াত এর জন্যে নয়। চুপ থাকি হয় ভয়ে আর না হয় নিজ কোন স্বার্থ জড়িত থাকার কারণে। স্বার্থ বলতে অর্থও হতে পারে, বা সম্মান, পরিচিতি, নিরাপত্তা ইত্যাদিও হতে পারে। যেমন আমি তবলীগের সাথে জড়িত আছি, এখন যদি কোন কথা বলি তাহলে আমার মান-মর্যাদার উপর আঘাত পড়ে। তাই দুনিয়ার দর্শক থাকাই আমার জন্য বেশ সুবিধাজনক। কিন্তু নিজেকে একজন বিবেকবান ব্যক্তি হিসাবেও প্রকাশ করতে চাই। তখন ইস্তেমায়ীয়াত ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে নীতির মুখোষ পরে জনসম্মুক্ষে হাজির হই।
অনেক দিন আগের কথা; যদিও সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর এর সাথে নয় কিন্তু কাছাকাছি। তবলীগের ব্যাপারেই কাকরাইলের ভিতরে মুরব্বীদের পর্যায়ে কিছু অশুদ্ধ কাজ একজন পুরনো জিম্মাদার সাথীকে বললাম এগুলোতো ঠিক নয়, কিছু করা বা চেষ্টা করা দরকার। উনি বললেন ‘এটা বড়দের ব্যাপার, আমাদের এখানে নাক না গলানোই ভাল’। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম “একজন মুরুব্বি যদি আপনার বাড়ি দখল করে ফেলেন তা হলে আপনি কি আদবের সাথে তার হাতে চাবি দিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেন মুরুব্বির সম্মানার্থে?” এর কোন উত্তর উনি দিলেন না সরে গেলেন। সরাসরি উত্তর না দিয়ে বরং এটার একটা অন্যভাবে দেবে।
অনেক বছর আগে, এই বর্তমান শুরা ইত্যাদি হওয়ার আগে হাজী আবদুল মুকীত সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিছু ভুল কাজ করেছিলেন। ভুল ত্রুটি হতেই পারে। কাছের লোকের দায়িত্ব সংশোধন করে দেওয়া। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি ট্রেনে থার্ড ক্লাসের টিকেট নিয়ে সেকেন্ড ক্লাসে উঠেছিলেন। টিটি যখন খুব রাগারাগি, বকাবকি করলেন তখন উনিও একটু রেগে উত্তর দিলেন। অথচ তাঁর এখানে রেগে যাওয়ার অধিকার নেই। টিটির বলার অধিকার আছে, যদিও বকাবকির অধিকার নাই। হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সফরে উনার খাদিম হিসেবে সংগে ছিলেন, আর এনামুল হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন একেবারেই ছোট বালক। টিটি চলে যাওয়ার পরে উনি সংশোধন করে দিলেন। হাদিস শোনালেন-
اِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا
‘হকওয়ালার কথা বলার অধিকার আছে’।
হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরের ষ্টেশনে গিয়ে টিটির কাছে মাফ চাইলেন।
আহমদ ইবনে হাম্বল রাদিআল্লাহু আনহু যখন মামুন আর মনসুর এর মোকাবেলা করলেন তখন গোটা খেলাফত বিভক্ত হয়ে গেল। সম্পূর্ণ খেলাফতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ল। আহমদ ইবনে হাম্বল রাদিআল্লাহু আনহু যদি চুপ থাকতেন আমরা যেটাকে ‘ফিতনা’ বলি সেই ফিতনা হত না আর দেশে শান্তি থাকত। কিন্তু ঐ জাতীয় বাতিল শান্তি কাম্য নয়। বরং হক্ককে হক্কের জায়গায় রেখে তারপর যতটুকু পারা যায় শান্তি কর। কিন্তু হক্ককে বিসর্জন দিয়ে শান্তি কর আর ফিতনা এড়াও- এটা শুদ্ধ নয়। আর এটা যে শুদ্ধ নয়, এই দৃষ্টান্ত উনি একা নন, বরং সব জমানার আল্লাহওয়ালারা মোকাবেলা করেছেন। সংশোধন করেছেন, মেনে নেন ভাল কথা। না মানেন; না মানলে যে পরিস্থিতি হয় সেই পরিস্থিতিকে আমরা সাধারনত ফিতনা বলি। আসলে মানুষের মধ্যে যুদ্ধ হওয়া বা মতানৈক্য হওয়া বা তর্কবিতর্ক হওয়া বা মনোমালিন্য এগুলোর নাম ফিতনা নয়। ফিতনা হচ্ছে হক্ক আর বাতিলের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হওয়া; যে কোনটা হক্ক আর কোনটা বাতিল এটা দিশা করতে পারছে না, বিভ্রান্ত- ঐ জাতীয় অবস্থা হচ্ছে ফিতনা। আহমদ ইবনে হাম্বল রাযিআল্লাহু আনহু যদি চুপ থাকতেন তাহলে বিরাট ফিতনা সৃষ্টি হত যে মামুনের একথা আর মনসুরের একথা যে ‘কোরআন মাখলুক’ এই কথা তাহলে বোধহয় শুদ্ধ। এইটা হলো ফিতনা। আর এর মোকাবেলায় উনার দাড়িয়ে যাওয়ায় গোটা দেশের মধ্যে জাহেরিভাবে শৃঙ্খলার খুব অভাব হলো। দুইদল যখন হয়ে যায়, যুদ্ধ হয়, মারামারি- কাটাকাটি হয়। কিন্তু ফিতনা ডুবে গেল, ঐ যে মিথ্যা কথা বা ভুল কথা যেটা ছিল ঐটাকে আল্লাহ তা’আলা মুছে দিলেন। উনার চুপ থাকা ছিল ফিতনা। সেজন্য আমরা অনেক সময় ফিতনা বুঝতে পারিনা। বাতিলের মুকাবেলা না করে যারা চুপ থাকে বা হাঁর সাথে হাঁ মিলায় শরীয়ত তাদের তীব্র নিন্দা করে। সুফিয়ান সাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদেরকে মুদাহিন বা তোষামোদকারী বলেছেন।
দ্বিতীয় কথা হল; কেউ যদি মোকাবেলা ইত্যাদি করেও, তাৎক্ষনিক ভাবে অসন্তুুষ্ট হলেও আল্লাহ তা‘আলা তার ঈমানের বরকতে তাকে সত্য কথা বুঝিয়ে দেবেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কথা সহজে বুঝা যায়। কাকরাইলে এইসব সমস্যা হত। সরাসরিও বলতাম, আর নিজামুদ্দিনের হযরত এনামুল হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে চিঠিও লিখতাম। এর আগেও অনেকেই নিজামুদ্দিনে চিঠি লিখেছেন কিন্তু ঐ চিঠিগুলো বেনামি থাকত। কেন বেনামি? বেনামী এইজন্য যে নাম প্রকাশ করলে তার ভয় তার উপর যদি আক্রমন হয়! গোপনে চিঠি লিখতেন আর প্রকাশ্যে চুপ থাকতেন। চুপ থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলে হয়ত এটাই বলতেন যে ফিতনা চাইনা, অথচ গোপনে লিখছেন। বেনামী চিঠি নিজামুদ্দিনে প্রচুর গেছে, কিন্তু বেনামী হওয়ার কারণে তাঁরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারতেন না। আমি যে চিঠি লিখতাম সব চিঠি নাম ঠিকানা দিয়ে লিখতাম, আর তার একটা কপি নিজ হাতে হাজী সাহেবের হাতে দিতাম। হাজী সাহেব অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হতেন যা বলার বাইরে। কিন্তু যাহেরীভাবে কিছু করবারও নেই। কথাগুলো লিখছি তাঁরই বিরুদ্ধে আর খুব উগ্র ভাষায় আর হযরতজীর কাছে, আর তাঁর হাতে আবার কপিও দিচ্ছি। খুব অসন্তুষ্ট হতেন।
অপরদিকে নিজামুদ্দিন থেকে হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা আমার এই লিখাকে বন্ধ করার জন্য কোন পদক্ষেপ যে আমি না বলি বা নিরুৎসাহিত করা- ওরকম কিছুই করেননি, বরং পরোক্ষভাবে বলা যেতে পারে উৎসাহিত করেছেন। চুপ থাকতে বলেননি আমাকে। এইবার সফরে আলীগড়ের খালিদ সিদ্দিকী সাহেব; যিনি হযরতজী রহমাতুল্লাহি আলাইহির অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি, বলা যেতে পারে যিনি আলীগড়ে কাজ উঠিয়েছেন, পরবর্তি আলীগড়ের যত প্রফেসর আর তবলীগওয়ালা আছে সবাই মোটামোটি খালিদ সিদ্দিকী সাহেবের শিষ্য। তো খালিদ সিদ্দিকী সাহেব এই বছর ইজতেমার সময় সফরের সময় এই কথাটা উল্লেখ করছিলেন। গতকালকে যে লুঙ্গি পরেছিলাম ঐটা উনার দেওয়া, খালিদ সিদ্দিকী সাহেবের হাদিয়া। এই সফরে উনি বলছিলেন যে, আমার চিঠি যখনই হযরতজীর কাছে যেত খুব কদর করতেন আলহামদুলিল্লাহ। আলীগড়ে চিঠি পাঠিয়ে দিতেন পূনরায় চিঠি নিয়ে এটা আলোচনা বিশ্লেষন করা এবং পরবর্তী চিন্তা করার জন্য যে কি করা যায়। উনারা ছিলেন সেজন্য বলা যেতে পারে পাঠাতেন। আর খালিদ সাহেবকে হযরতজী দেখা হলেই বলতেন “ভাই মুশফিক কা খত আয়া”। বলতেন, তারপর চিঠি দিতেন। নিরুৎসাহিত কখনো করেন নি। ওটা ঐ দিক থেকে। যদি এই বলাটা যদি খারাপ হত তাহলে কোন না কোন ভাবে, আভাস ইঙ্গিতে কোনভাবে বলতেন। কিন্তু তা করেন নি বরং উৎসাহিত করেছেন। বাকি হল এই দিকে।
অন্য একটা প্রসঙ্গ তো রয়ে গেল যে, হাজী সাহেব আমার উপর এত নারাজ হতেন। বড় আনন্দের সাথে আমি আরেকটা কথা শেষ প্রসঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করতে চাই যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত হাজী সাহেবের সাথে বলা যেতে পারে একটা প্রবল মোকাবেলা চলেছে। আর হাজী সাহেব বহুত পেরেশানও হয়েছেন। মাওলানা আবুল ফাত্তাহ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি কাকরাইলের একজন মুরুব্বী ছিলেন। উনি একবার এই কথাকে এই ভাবে প্রকাশ করছিলেন, আমি ছিলাম ওখানে আমাকে বলছিলেন যে, আমার দৃষ্টান্ত এরকম যে, পায়ে বেধে যদি কেউ উল্টো টেনে নিয়ে যায়, আর পায়ে বাধা যে আর উল্টো করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বড় অসহ্য ছটফট করে, তো ‘মুশফিক যেন হাজী সাহেবকে এরকম পায়ে বেধে উল্টো টেনে নিয়ে যাচ্ছে’। তো পেরেশান হয়েছেন, খুব পেরেশান হয়েছেন। কিন্তু আনন্দের কথা যেটা, আমি যেটা বলতে চাই, হাজী সাহেবের সাথে আমার শেষ কথার লেনদেন হল এই, কোন এক কথার পরিপ্রেক্ষিতে উনাকে বলেছিলাম, একজনের ব্যপারে একটা অন্যায় কাজ করেছিলেন, উনার কাছে মাফ চাইতে হবে, তো হাজী সাহেব মাফ চাইতে রাজি হলেন, “ঠিক আছে মাফ চাইবো”। এর পরে হাজী সাহেব যে ঘরে থাকতেন ঐটা ছিল কাকরাইলে ডানদিকে যে সিড়ি, সিড়িতে উঠলেই হাতের বায়ে যে রুমটা পড়ে ওখানে হাজীসাব থাকতেন। আমাকে একদিন ডাকলেন। ডেকে বললেন, “মুশফিক, আমি তোমাকে আমার মুহসীন মনে করি”। মুহসীন মানে যে এহসান করে, যে অনুগ্রহ করে। বললেন, তারপর আমি চলে এলাম তার দু’দিন পরেই ইন্তেকাল করলেন। তো আমার শেষ কথা হাজী সাহেবের সাথে যেটা, ঐটা উনি আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন যে, মুশফিক, তুমি আমার মুহসীন। কারণ এর চেয়ে বড় এহসান কী হতে পারে যে একজন মানুষকে তার ভুল দেখিয়ে দেওয়া! আর এই ভুল দেখিয়ে দেওয়ার কারণে সে নিজে ভূল সম্বন্ধে সংশোধনও হবে, অন্যকেও ক্ষতি থেকে বাচাবে। আর তাকে ভুল পথে দেখে চলতে থাকা, যেহেতু তাকে ভয় পাই- এটার নাম আদবও নয়, আর ফিতনা ভয় করাও নয়, এটাকে উর্দূতে বলে চাপলুসি, তোষামোদী। আর তোষামোদকারীরা তোষামোদ করে উনাকে বেচে নিজের কিছু লাভ নেওয়ার জন্য। নানান বড় বড়, এই সেই সুন্দর সুন্দর কথা বলে। কখনো তারা বুঝে, অনেক সময় তারা বুঝেওনা। ‘আপনি দুনিয়ারও মালিক আখেরাতেরও মালিক’! একজন সাধারন মুসলমান তো বুঝে নেয়, কিন্তু ভন্ড পীর-টীর এগুলো অনেক সময় বুঝেও না। কখনো আবার সীমানাও রাখতে পারে না। ঐ একজন নেতা ছিল বোরকের সেক্রেটারী, খুব চালাক চতুর। আইয়ুব খান একেবারে বোকা মানুষ ছিল না। তোষামোদ কখনো বুঝত আবার কখনো যদিও বুঝত না, তো অনেক সময় বুঝতও। আমি তো আর আইয়ুব খানকে চিনি না, শোনা কথা। তো একদিন আরেক জনের কাছে আইয়ুব খান উক্তি করছিল যে, “একথা ঠিক যে আমরা আর্মিতে বড় হওয়া মানুষ। আর আর্মিতে বড় হওয়া মানুষ সম্বন্ধে বলে যে এদের বুদ্ধি থাকে হাটুতে, লিখাপড়া জানে না, বুদ্ধিশুদ্ধি কম। কিন্তু ও আমাকে যে ভাবে তোষামোদ করে, তোষামোদ করাতে বুঝায় যে আমাকে যে মাত্রার বোকা মনে করে, আমি কিন্তু তত বোকা না”। আর এই কথা যদি সে বলে তুমি দুনিয়ারও মালিক আর আখিরাতেরও মালিক তাহলে নিশ্চয় একটু বেশী বোকা মনে করে বলছে।
তো তোষামোদকারীরা তোষামোদ করে কিছু ফায়দা হাসিল করবার জন্য। এরা শুভকামী নয়। বরং যে শুভকামী সে তার মঙ্গল চায়, তার সংশোধন চায়। আর আল্লাহর মেহেরবানীতে আমি তো এই কথা দাবী করতে পারব, দীর্ঘদিন যদিও হাজী সাহেবের সাথে মোকাবেলাই করেছি আর উনি আমার কারণে যথেষ্ট পেরেশানও হয়েছেন, এর পরেও আমি জোর দাবী করে বলতে পারি যে, উনার চারপাশে যে তোষামোদকারীরা যারা ছিল, বিরাট একদল, ভীরু, এদের চাইতে নিঃসন্দেহে আমি হাজী সাহেবকে অনেক বেশী মোহাব্বত করি। ওরা হাজী সাহেবকে বেচে খেয়েছে। আর এই চেষ্টার মধ্যে রয়েছে যে কেমন করে উনাকে গুলে খাওয়া যায়। তো ফিতনা এটা নয়। ঐ প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ প্রশ্ন একটু সূক্ষœ। কিন্তু আশা করা যায় কিছু নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
২য় একটা কথা হল, এর সাথেই, আরবীতে একটা কথা আছে ‘দুই খারাপের মধ্যে কম খারাপকে বেছে নাও’। অন্য যেটা প্রশ্নের সাথে জড়িত ঐটায় একটু আসছি। এটা হল যে তবলীগের মুরুব্বী সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে দিলাম। এতে সাধারন মানুষের মধ্যে তবলীগ এবং তবলীগের মুরুবীদের ব্যাপারে যে শ্রদ্ধা আছে ঐটা নষ্ট হল। এটা একটা ক্ষতিকর জিনিস। কারণ মানুষতো ভালবাসা, শ্রদ্ধার কারণে অগ্রসর হয়। আর গোটা দেশে বরং দুনিয়াতে যে তবলীগ এত সহজে চলছে তার বড় কারণ হল যে আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে এই কাজের মোহাব্বত মানুষের দ্বীলের মধ্যে দিয়েছেন। নিজে চিল্লা না দিলেও তবলীগকে সে মোহাব্বত করে। আর তবলীগের মোহাব্বত আর তবলীগের মুরুব্বীর মোহাব্বত এই দুই জিনিসকে আলাদা করা মুশকিল। একটার সাথে আর একটা জড়িত। এখন মুরুব্বীর মোহাব্বত যদি দ্বীল থেকে বের হয়ে যায় তো তবলীগের মোহাব্বতও বের হবে। ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন বা একটা অন্যায় কাজ করছেন; যদি বলি তাহলে দোষ প্রকাশ হবে, উনার মোহাব্বত কমবে, সেই মোহাব্বত গিয়ে তবলীগের উপর আঘাত করবে। যদি না বলি; এই অন্যায় চলতে থাকবে। এই অন্যায় চলতে থাকা আর শুধু চলতে থাকবে না, বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এই বৃদ্ধি পেয়ে যাবার কারণে ধীরে ধীরে গভীরভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে এবং হবে- ঐটা এর চেয়ে অনেক বেশী মারাত্বক।
ঐ আগেই, আমিতো কাকরাইল যখন এসেছি, প্রথম প্রথম যখন এই কথাগুলো বললাম, প্রথম কোন একটা জিনিস আমার চোখে পড়ল শুদ্ধ নয়। বিস্তারিত আমার মনে নেই, হাজী সাহেবের ব্যাপারে কিছু অশুদ্ধ কথা হল, সরাসরি বলতে আমার একটু সংকোচ লাগল। চিঠি লিখে হাজী সাহেবের হাতে দিলাম, উনার ব্যাপারেই সরাসরি উনাকেই বললাম যে এই কাজ আপনি করছেন এটা ঠিক নয়। কিন্তু ঐটার প্রতিক্রিয়া আমার কাছে খুব ভাল লাগল না। যে এটা একটু সংশোধন করবার, সে হিসেবে চেষ্টা করা ইত্যাদি- এরকম কিছু আমি লক্ষ করলাম না। বেশ কিছুদিন পরে ঐটা, এই জাতীয় আরো কিছু কথা নিয়ে বিস্তারিত একটা চিঠি লিখলাম, টাইপ করা প্রায় ৩/৪ পৃষ্ঠা ছিল বোধহয়, আমার ভাল করে মনে নেই, ৩ পৃষ্ঠার মত ছিল টাইপের চিঠি। হাতের লিখা নয়, তার মানে বেশ লম্বা চিঠি। একটু মাশোয়ারাও করতে চাইলাম যে এর মধ্যে অনেক সমালোচনা আছে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না যে এইগুলো দেওয়া শুদ্ধ হবে কি হবে না, আদবের খেলাপ হবে কি হবে না, ফিতনা হবে কি হবে না, ইত্যাদি নানান ধরনের দ্বিধা দন্দের মধ্যে থাকার কারণে। হাজী সাহেবের কাছের যারা থাকেন, সম্ভবত নাসিম ভাই যিনি গতকালকে এখানে এসেছিলেন, আর বোধহয় ইঞ্জিঃ আনিস, এদের কাছে চিঠি দেখালাম। অনেক দিনের আগের কথা যেহেতু, সেজন্য কার হাতে চিঠি দিয়েছিলাম ঐ ব্যাপারে মনে আমার একটু ভুল, ঠিক ভাল করে মনে করতে পারছি না। তাদেরকে দিলাম যে এই চিঠি আমি হাজী সাহেবকে দিতে চাই। আনিস তো অনেক জুনিয়র, তুমি বলেই সম্বোধন করি, নাসিম ভাই আমার বয়সেও একটু বড়, আপনি বলেই সম্বোধন করি। মতামতের জন্য চিঠি দিলাম। চিঠি উনারা পড়লেন। পড়ে তারপর বললেন যে ঠিক আছে আমাদের হাতে দিয়ে দিন, পৌছে দিব। আমি উনাদের হাতে দিয়ে দিলাম হাজী সাহেবের হাতে পৌছাবার জন্য। আমার বর্তমান বিশ্বাস সেই চিঠি তারা পৌছায় নি। এইটা আমি ধারনা করেছি অনেক পরে। আর এইটা তখন ধারনা করেছি যখন এদের সততার ব্যাপারে আমি সন্দিহান হয়েছি। তারা যে এটা আমার সন্দেহের মধ্যেই আসেনি যে বলে আমার চিঠি নেবে আমার কাছ থেকে পৌছাবে বলে আর ঐটা গায়েব করে দেবে এরকম একটা সম্ভাবনা আমার মনের মধ্যেই আসেনি। কিন্তু সম্ভবত চিঠি পৌছায় নি। কেন? যে এটা হাজী সাহেবের কাছে প্রিয় জিনিস হবে না। আর তারা চাপলুসি করতে চায়। তো শুনেছি বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীর যখন পতন হচ্ছে আর ফোর্স ওরা অগ্রসর হচ্ছে আর জার্মানী পেছন দিকে আসছে, পরাজয় হচ্ছে ধীরে ধীরে। বার্লীন পর্যন্ত যখন এই বাহিনী পৌছে গেছে তখনও হিটলারের চারপাশের অফিসার যারা, চাপলুসরা তারা নাকি হিটলারকে বলছিল যে ‘এখনো সম্পূর্ণ ইউরোপ আমাদের নিয়ন্ত্রনে’। কারন সত্য কথা বললে সে অসন্তুষ্ট হবে। আর চাপলুসরা অসন্তুষ্ট করতে চায় না, সন্তষ্ট করতে চায়। সেজন্য নিজে তো কিছু বলবেই না, অন্য কাউকে সত্য কথা বলতেও দেবে না। এইভাবে ঐ কথাকে বেশী পৌছালেন না। এর পরবর্তীতে যখন আমি এটা উপলব্ধি করলাম তখন আমি নিজেই চিঠি দিতাম আর কপি দিতাম ইত্যাদি। আল্লাহর ফজলে তাতে জাহেরী ভাবে ফায়দা হয়েছে, পরবর্তীতে হায়াতে থাকতেই শুরা ইত্যাদি বানানো হল, তাতে অনেকগুলো জিনিস সেরে গেল। ঐ সমস্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে।
হাজী আব্দুল মুকিত রহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক গুলো ভুল কাজ করতেন, যেগুলো বললাম যে মানুষ তো আর ফিরিশতা নয়, ভুল কাজ তো সে করবেই। আর এরকমও নয় যে একবারে আব্দুল কাদির জিলানীও পার হয়ে চলে গেছে, নফ্স বলে কোন জিনিস নেই, তাও তো আর নয়। সাধারন মানুষ, সাধারন মানুষের মধ্যে তারতম্য আছে, আমার চেয়ে কিছু ভাল বা আমাদের অনেকের চেয়ে ভাল। এজন্য দোষ ইত্যাদি থাকা এটা কোন অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। আর এটা বরং না থাকাটাই একটা অস¦াভাবিক ধরনের জিনিস হবে। এগুলো ছিল, কিন্তু বর্তমানে অনেকগুলো জিনিস যেগুলো চোখের মধ্যে আসছে হাজী সাহেব এই সবের অনেক দূরে, অনেক উর্ধে ছিলেন। হাজী সাহেবের ব্যাপারে অনেকের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। উনার ব্যাপারে বেশী অভিজ্ঞতা একটা অতিরিক্ত এবং বেতালা রাগ, যেটা উগ্র। শুধু যে বাহিরের মানুষের উপর করতেন তাও নয়। উনার নিজের ছেলেকে পিটিয়ে রাখতেন। এটা মিজাজের ব্যাপার। তো এইটা সম্ভবত লুৎফর রহমান সাহেবের কথা, ভাল করে এইটাও আমার মনে নেই যে কে বলেছেন। হাজী সাহেব নাকি উনার ছেলেকে কি একটা ব্যাপারে পিটাচ্ছেন। কিন্তু ছেলে তার নিজের উপর অটল। মাদ্রাসায় যাওয়া বা না যাওয়া কি একটা ব্যাপারে। তো লুৎফর রহমান সাহেব শেষ পর্যন্ত বললেন “বাপের বেটা সেও”। রাজি করাতে পারেন নি। কিন্তু কেউ কখনো এই কথা ধারনাই করবে না যে হাজী সাহেব কাকরাইলের টাকা মেরেছেন। বরং নিজের উপার্জিত টাকা প্রচুর ঢেলেছেন। শুধু ঢেলেছেন না, প্রচুর ঢেলেছেন। কিন্তু পরবর্তিতে অবস্থা একবারে ভিন্ন। কিন্তু এই জিনিসগুলো অনেক আগে থেকে ছিল। এই যে রেগে যাওয়া, রেগে যাওয়ার কারণে মানুষকে বকাঝকা ইত্যাদি যেগুলো করা উচিত নয়। আমি একবার কাকরাইলে এসেছি। এসে কিছুক্ষন পরে আবার চলে গেছি। তারপর হাজী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি আমার খোজ করেছেন, মুশফিক এসেছিল গেল কোথায় ইত্যাদি। কেউ ঠিকমত বলতে পারেনি। ওদের উপর খুব রাগারাগি করেছেন যে একজন লোক এল চলে গেল তোমরা খোঁজ করলেনা ইত্যাদি। তো পরের বার যখন আমি আবার কাকরাইল গিয়েছি তো কয়েকজন আমাকে এই কথা বললেন আর বিশেষ করে, খাছ করে আবুল ফাত্তাহ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনি আমাকে বললেন, ‘ভাই তোমরা আমাদের জন্যে এত সমস্যা কর’। তো কি সমস্যা? “যে এক চক্কর দিয়ে ঘুরে চলে গেলে কাউকে কিছু বললেও না, আর পরে আমাদের উপর চোটপাট, যে ঘুরে চলে গেল তোমরা কেন খোজ করলে না?” এর মধ্যে কোন বদনিয়তি নেই বরং ভাল নিয়ত, একজন লোক এসেছে তাঁর যত্ন করা দরকার, তাঁর কদর করা দরকার, তোমরা কিছু করলে না এজন্যই রাগারাগি করেছেন। কিন্তু বে-লাইনে কখনো কিছুটা অতিরিক্ত করে ফেলতেন। মাপ ঠিক নয়।
তখনকার পুরনো জিম্মাদার মুরুব্বীরা ছিলেন। প্রথমত মাওলানা আবদুল আজীজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তার পরের পর্যায়ে ছিলেন মাওলানা আলী আকবর রহমাতুল্লাহি আলাইহি; ইনারা সহ্য করতেন, আর তাঁদের বেশীর ভাগেরই কথা ছিল যে, ‘প্রকাশ করলে কাজের ক্ষতি হবে’। এজন্য প্রকাশ করতেন না, বহুত উল্টাপাল্টা জিনিস সহ্য করতেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনাদের প্রকাশ না করার ক্ষতি বহুত বেশী হয়েছে। প্রথম দিকেই ধরলে এটা প্রশ্রয় পেয়ে বাড়ত না। আর না ধরাতে প্রশ্রয়ে বেড়েছে। এই সেদিনই, মাত্র কিছুদিন আগে যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব মাদ্দাযিল্লুহুল আলাইহি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, হযরত মাওলানা আবদুল আজীজ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বসে অনেক কেঁদেছেন। কিন্তু উনার কাছে গিয়ে বসে কাঁদতেন, যে জায়গায় বসে কান্নার দরকার ছিল সেখানে কাঁদতেন না। এটা প্রকাশ করার দরকার ছিল। চুপচাপ উনার কাছে বসে কেন কাঁদবেন! এটা প্রকাশ কেন করতেন না? ঐ জন্যে যে, ‘কাজের ক্ষতি হবে’। কিন্তু না করাতেও কাজের ক্ষতি হয়েছে। বড় ক্ষতি হয়েছে।
একটা কথা খুব বলা হত, আর এটা বোধহয় কথা বা গল্পের অপ-ব্যবহার হত। এক বাচ্চা আর দুই মা দাবীদার। দুজনই দাবী করে, “বাচ্চা এটা আমার”। বিচারের জন্য আনা হল। ঘটনা সত্য না মিথ্যা আমি ঠিক জানি না। আলী রাযিআল্লাহু আনহুর সম্বন্ধে শুনেছি। এটা ঐতিহাসিকরা বলতে পারবেন যে সত্য ঘটনা না একটা কাল্পনিক ঘটনা। আলী রাযিআল্লাহু আনহু বিচার করলেন যে, এই বাচ্চাকে দুই ভাগ করে ফেল মাঝখান থেকে কেটে, দুজনকে আধা আধা দিয়ে দাও। যখনি কাটতে উদ্যত হয়েছে, সত্যিকার মা যে সে বলছে “না, না, না, আমার না, আমার না, ওকে দিয়ে দাও, ওকে দিয়ে দাও”! আলী রাযিআল্লাহু আনহু বুঝতে পারলেন যে, এই আসল মা। আসল মা যে, সে বাচ্চাকে কাটতে রাজি হবে না। এই কথাকে বা এই ঘটনাকে খুব বয়ান করা হল। আর বয়ান করার তার সুবিধা এই যে, তোমরা চুপ থাক আর আমি বাচ্চা নিতে থাকি। একবার নেবে, দুইবার নেবে, তিনবার নেবে। অথচ এখানে উল্টে দাড়াবার দরকার ছিল।
তো যখন এই মোকাবেলা ইত্যাদি করেছি তো অবস্থার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। মাওলানা আলী আকবর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথা যেটা আমাকে এক ধরনের তৃপ্তি দেয়, কথা সরাসরি উনার কাছ থেকে শুনি নি, শুনেছি আমি সম্ভবত ইঞ্জিঃ আনিসের কাছ থেকে। তখনো দূরত্ব কম ছিল, অনেকগুলো কথা পেয়ে যেতাম। আলী আকবর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছিলেন যে, “আল্লাহ তাআলা মুশফিক কে পাঠিয়েছেন আমাদের উপর রহমতের জন্য”। এ কারণে অনেকটা উনাদের উপর অনেকগুলো নানান ধরনের অসুবিধা অত্যাচার ইত্যাদি কমে যেত। তো যে প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম, কথা ঠিক যে প্রকাশ করলে আলোচনা হয়, সম্মানের উপর আঘাত করে, মানুষের আস্থা কমে ইত্যাদি। কিন্তু না করাতে যে ক্ষতি ঐটা অনেক বেশী গভীর, পরে প্রকাশ পাবে, কিন্তু যখন প্রকাশ পাবে তখন যেরকম ঘুনে ধরা জিনিস ভিতর থেকে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, সেই অবস্থায় যখন যাবে, তখন যখন ভেঙ্গে পড়বে তখন প্রকাশ পাবে। কিন্তু ঘুনের এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয় বরং এর আগেই এটাকে সংশোধন করা দরকার। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার, আমল করার তৌফিক নসীব করুক। আর চেষ্টা তো করা দরকার, বারবার তবুও সন্দিহান থাকা, আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করা যে আল্লাহ্ তুমি আমাকে দিয়ে ভাল কাজ করাও। এটাও মাসনূন একটা দোয়ার মধ্যে আমি যেন মঙ্গলের দরজা খুলনে ওয়ালা বানায় আর অমঙ্গলের দরজা বন্ধ করনেওয়ালা হই।
اَللهُمَّ اجْعَلْنَا مِفْتَاحًا لِلْخَيْرِ وَ مِغْلَاقًا لِلشَّرِّ
বড় ভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ মঙ্গলের দরজা খুলনেওয়ালা বানান আর অমঙ্গলের দরজা বন্ধ করনেওয়ালা বানান। এমন যেন না হই যে, অমঙ্গলের দরজা খুললাম আর মঙ্গলের দরজা বন্ধ করলাম। বরং আল্লাহর কাছে এটা চাওয়া যে আল্লাহ তুমি আমাকে ব্যাবহার কর এমন ভাবে, যে এর দ্বারা যেন অমঙ্গলের পথ বন্ধ হয়। আর নইলে এটা ভুল পথে চলতে থাকবে।
তরীকার ইতিহাসে, আমাদের দেশে চিশতিয়া তরীকা ধীরে ধীরে বেশ বিদ’আত এর দিকে চলে গেল। হযরত রশীদ আহমদ গঙ্গোহী রহমাতুল্লাহি আলাইহি খুব মজবুত ভাবে এই বিদ’আতের মোকাবেলায় দাঁড়ালেন আর সম্পূর্ণ তরীকা কে আবার ঘুরিয়ে শরীয়ত এর উপর আনলেন। এজন্য উনার সাথে নানান ধরনের সমালোচনা ইত্যাদি হয়েছে। আজকেও মনে হয় কোন জায়গায় একটা কথা এসেছিল যে উনি কিয়ামের খুব বিরোধী ছিলেন। আর বিদ’আতিদের আগের মাশায়েখরা কিয়াম করতেন। উনারই পীর শেখ ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই ব্যাপারে রশীদ আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির মত অত কঠোর ছিলেন না। মোটামোটি চুপচাপ থাকতেন, কিছু বলতেন না। ঐ চুপচাপ থাকার সুযোগ নিয়ে উনাকে বলেছে আপনার শেখ তো এটা সমর্থন করেন, আর আপনি বিরোধিতা করেন! তখন উনি বলেছিলেন যে, “আমি যতটুকু জানি উনি সমর্থন করেন না, আর যদিও করেন ফতোয়া উনাকে আমার কাছ থেকে নিতে হবে। আমি মুফতি, উনি না”।
এরকম কঠোর ভাষায় বলার প্রয়োজন হয়েছিল। এমনি খামোখা বলেননি, বলার প্রয়োজন ছিল। এতে বিরাট ফায়দা এই হয়েছে যে চিশতিয়া তরীকা; পরবর্তি সময় যার দ্বারা গোটা এই ভারত উপমহাদেশ ইত্যাদিতে বহুত ফায়দা হয়েছে, ঐটা বিদ’আত মুক্ত হয়েছে। আর এর আগ পর্যন্ত অনেকেই দেখেছেন যে শুদ্ধ নয়, কিন্তু ফিতনার ভয়ে কিছু বলতেন না, যে বললে ফিতনা হবে, আর ঐ না বলাটাই ছিল ফিতনা। আল্লাহ আমাদেরকে শুদ্ধ কথা বুঝার তৌফিক নসীব করুন। আমীন।
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ اِلَيْكَ
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَ سَلَامٌ عَلٰى الْمُرْسَلِيْنَ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ