বুধবার, জুন ২৫

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ نَسْتَعِيْنُهُ وَ نَسْتَغْفِرُهُ   وَ نَعُوْذُ بِهِ مِنْ  شُرُوْرِ  اَنْفُسِنَا  وَ مِنْ سَيِّئَاتِ  اَعْمَالِنَا ، مَنْ يَهْدِ هِ  اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ  وَ مَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ   وَاَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلٰهَ الَّا اللهُ  وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا  عَبْدُه وَ رَسُوْلُهُ ۝ فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ۝   بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ۝ مَنْ  عَمِلَ صَالِحًا مِنْذَكَرٍ اَوْ  اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّه حَيَاةً  طَيِّبًا وَ لَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَ حْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ۝ وَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ   يٰا اَيُّهَا النَّاسُ قُوْلُوْا لَا اِلٰهَ  اِلَّا اللهُ  تُفْلِحُوْنَ ۝ أَوْ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ  وَ السَّلَامُ۝

জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কোন এক অঞ্চলে পৌঁছেছেন, ওখানে গিয়ে দেখলেন যে এক লোককে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, তার হাত-পা কাটা। তিনি খোঁজ নিলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে সে চুরি করেছিল তো হাত কেটেছে। আবার চুরি করেছে, তারপর আবার হাত কেটেছে। তারপর পা কেটেছে। শেষ পর্যন্ত গ্রামের লোক তাকে ফাসি দিয়েছে। উনি যখন গিয়ে পৌঁছেছেন তখন সে ফাসিতে ঝুলছে। সবকিছু জানার পরে জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এগিয়ে এলেন, আর সেই ঝুলন্ত লোকের পায়ে চুমা খেলেন। অন্যান্য লোকেরা সবাই খুব অবাক হল যে, এরকম একজন লোক যে বারবার চুরি করে আর তাকে উনি এত সম্মান শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন! তো উনি বললেন যে, ওর চুরি করাকে আমি সম্মান দেখাচ্ছি না, কিন্তু ওর এস্তেকামতকে আমি সম্মান দেখাচ্ছি। অটল; একটা জিনিস ধরেছে, ছাড়েনি।

এই সিফত নবীদের সিফত, নবীরা ছাড়তেন না। নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম  একদিন দু’দিন নয়, একশ দুইশ বছর নয়, সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছেন আর অল্প কয়েকজন বাদে কেউ কবুল করল না। কবুল তো করলই না বরং বিদ্রুপ করে, উনার দিকে তাকায় না, কানে আঙ্গুল দেয়। কিন্তু নুহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম  উনার কাজ ছাড়েন নি। তো হিম্মতের সাথে, মজবুতির সাথে। আল্লাহ তা’আলা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে এস্তেকামত দান করেছেন। আর এস্তেকামত দান করেছেন বাছিরাত দিয়ে; এটা অন্তর্দৃষ্টি যেটা দিয়ে দূর পরিণতিকে আল্লাহ তা’আলা দেখার তৌফিক দান করেন। ঐ দেখার কারনে তার হিম্মত বেড়ে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় দাওয়াত দিচ্ছেন, আর কাফিররা উনার চেহারায় ধুলা ফেলছে, থুথু ফেলছে। যায়নাব রাযিআল্লাহু আনহা এলেন, পানি নিয়ে ধুয়ালেন আর কাঁদছেন, বাপের এই অবস্থা দেখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই কথা বলে সান্তনা দিলেন যে, “তোমার বাপের এই কথা ততদূর পর্যন্ত যাবে, যতদূর পর্যন্ত সূর্যের আলো যায়”। মানে সব জায়গায় যাবে। এমন কোন কাঁচা বা পাকা ঘর থাকবে না যেখানে এই কথা না পৌছায়।

بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ بِذُلِّ ذَلِيلٍ

ইজ্জত ওয়ালার ইজ্জত বৃদ্ধি করে অথবা লাঞ্ছিতের লাঞ্চনা করে, কিন্তু ঢুকবে। সম্মান দিয়েই হোক, আর লাঞ্ছিত করেই হোক। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন, ঐ দূর পরিণতিটা জানেন, ঐ জানার কারনে এই সব কষ্ট সহ্য করা সহজ হয়েছে।

কেউ যদি তার ভাল পরিনতি জানে, সব সহ্য করবে। তো আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে আল্লাহ তা’আলা পরের কথা আগে জানিয়ে দিয়েছেন। সূরা ক্বাসাস এ মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোটামোটি জীবনী আছে, সূরার প্রথম দিকেই আল্লাহ তা’আলা এই কথা আলোচনা করেছেন যে, ‘আল্লাহ তা’আলা এই ফায়সালা করেছেন যে বনী ই¯্রাইলকে উপরে উঠাবেন, আর তাদের শত্রুদেরকে নিচে নামাবেন’

এটা আল্লাহ তা’আলা সূরার প্রথম দিকেই ঘোষণা করেছেন। এরপরে মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম, উনাকে নদীতে ফেলে দেওয়া, ফেরাউনের ঘাটে আশ্রয় নেওয়া- লম্বা ইতিহাস। গিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐ ওখানেই গিয়ে পৌছালো, যেখানে সূরা আরম্ভ হয়েছে। তো আগেই জানিয়ে দিলেন যে, শেষ এইটাই। কেউ যদি শেষটা জানে, জানে যে শেষ পর্যন্ত তারই ফাতাহ হবে তাহলে সব কষ্ট তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

তো আল্লাহ তা’আলা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে বড় কাজের জন্য নির্বাচন করেছেন, আর তাঁদের বড় শক্তি যেটা দিয়েছেন; যে তাঁদের মনের ভিতর হিম্মত, বাছিরাত, যেটা পরিণতি দেখিয়ে দিয়ে মনের ভিতর হিম্মত দান করেছেন। আর এই হিম্মত বহুত বড় জিনিস। গত মানিকদির জোড়ে মাওলানা আতাউল্লাহ সাহেব (দাঃ বাঃ) বড় সুন্দর একটা কথা বললেন মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরি রহমাতুল্লাহি আলাইহির বরাত দিয়ে; তিনি বলতেন যে, হিম্মতই হচ্ছে ইসমে আজম। ইসমে আজম হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার ঐ নাম যে নাম দিয়ে ডাক দিলে আল্লাহ তা’আলা দোয়া কবুল করেন। শামছুল হক ফরিদপুরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন যে, ঐটা হিম্মত। হিম্মত নিয়ে যদি কেউ একটা জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, তো আল্লাহ তা’আলা তাকে দিয়ে তার কাজ করান, তাকে পূর্ণতায় পৌছিয়ে দেন।

আল্লাহ তা’আলার বহুত বড় মেহেরবানি যে, আল্লাহ তা’আলা এই বড় কাজের জন্য, বড় মহৎ কাজের জন্য আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হিম্মত দান করেছেন। এটি আল্লাহ তা’আলার খাস মেহেরবানী, সবচেয়ে বড় দান যে, এত অসুবিধার ভিতর দিয়ে আল্লাহ তা’আলা চলার মধ্যে মনের আগ্রহ দান করেছেন।

বৃহষ্পতিবারে যখন কাকরাইলে প্রথম জামাতকে ধরল, মারল, তারপর পুলিশ নিয়ে গেল ২৪ জনকে, পরের সপ্তাহে আরেক জামাত গেল। তাহলে এর আগে যারা এসেছিল তাদেরকে যে ধরল, মারল, পুলিশ নিয়ে গেল, সে জায়গায় কেউ ভয় পায়নি। এইটা বহুত বড় জিনিস যার মোকাবেলায় কোন শত্রু টিকতে পারেনা। যুদ্ধ কখন শেষ হয়? যুদ্ধ মানে এইটা নয় যে, অপর পক্ষকে সে মেরে শেষ করে দেবে। যুদ্ধ মানে অপর পক্ষ তার মনোবল হারাবে। বিশ্বযুদ্ধ কখন শেষ হল? বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল যখন জাপানে আমেরিকা অ্যাটম বোম ফেলল আর জাপান আত্বসমর্পণ করল। সব যখন মরে গেছে তখন নয়, কিন্তু মনোবল ভেঙ্গে গেছে, আর নড়তে পারবে না। এই মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া- এতেই যুদ্ধ শেষ। আমাদের দেশে অনেক সময় ষাড়ের লড়াই ইত্যাদি করানো হয়। এগুলো করানো উচিত নয় তবুও লোকে করায়। লড়ছে, হঠাৎ করে একটা ষাড় পালিয়ে দে দৌড়! ও যে গুতোগুতি ছেড়ে উল্টো দিকে দৌড় দিল, ও যে দুর্বল বা ও পারবে না- এমন কথা নয়। বরং কোন কারণে ওর হিম্মত নষ্ট হয়ে গেছে।

সাহাবাদের এই হিম্মত থাকার কারণে বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য তাঁদের মোকাবেলা করতে পারেনি। বীরে মাউনায় ৭০ জন ছিলেন, ৬৭ জন শহীদ হয়ে গেলেন। ৩ জন বাহিরে ছিলেন, উট চড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে দেখলেন যে ৬৭ জন এখানে শহীদ। এই ৬৭ জনকে যারা শহীদ করেছে এরা উপস্থিত। যেখানে তাঁদের ৬৭ জন সাথীরা শহীদ হয়ে গেলেন সেখানে কোন যুক্তিতে এই ৩ জন গিয়ে আবার লড়তে আরম্ভ করলেন? এই যে ‘অযৌক্তিক হিম্মত’-এইটার মোকাবেলা করতে পারেনি। বিশাল সাম্রাজ্য; রোম সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্য, বড় বড় সাম্রাজ্য । এদের যে পরিমান শুধু আর্মিই ছিল, রেগুলার আর্মি, সাহাবারা ততজন মুসলমানই ছিলেন না! তো বিশাল রেগুলার আর্মি, এত শক্তি, কিন্তু সাহাবাদের হিম্মতের মোকাবেলা কেউ করতে পারছে না। মুসলমানদের ক্ষেত্রে ঐ শেষ ব্যক্তিকে পর্যন্ত মারতে হবে, মেরে শেষ করতে হবে। তা না হলে ও ভয় পায় না, পালিয়েও যাবে না। এর মোকাবেলায় রোমী বাহিনীর ঐ প্রধান সেনাপতি যদি শেষ, তো যুদ্ধ শেষ।

আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাযিআল্লাহু আনহু রোমীদের বাহিনীর একেবারে ভিতরে একা ঢুকে গেলেন, ভিতরে যেখানে সম্রাট আছে অনেক পেছনে, সম্রাটের ওখানে গিয়ে তলোয়ার দিয়ে সম্রাটের মাথা কাটলেন, মাথা বর্শার আগায় বসালেন, আর বর্শার আগায় তার মাথাকে বসিয়ে আবার ফেরত চলে এলেন। একা গিয়ে বাহিনীর একেবারে ভিতরে ঢুকলেন, সম্রাটকে মারলেন, তার মাথা বর্শার আগায় বসালেন, আর একা আবার ফিরে এলেন। সবাই ‘থ’ হয়ে তাকিয়ে আছে। এইযে এরকম একা একজন লোক বাহিনীতে ঢুকে যেতে পারে এটা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। আসলে হিম্মতের মোকাবেলা করতে পারেনি। আর তারপর উনি ফিরে চলে এলেন, কেউ থামাল না, যুদ্ধ শেষ। সম্রাটকে মেরে ফেলল; যুদ্ধ শেষ। লাখো লাখো লোক, এরা নিজে চলতে পারে না। মুসলমানদের ক্ষেত্রে তা হয় না। মেরে ফেললে যুদ্ধ শেষ হয় না, ঐ শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত লড়বে। এজন্যে মুসলমানদের শক্তি কার্যত অনেক বেশী।

এক দুর্গের ভেতর দরজা বন্ধ করে তারা আটকে আছে। একজন আনসারি সম্ভবত ছিলেন, উনি বললেন যে আমাকে একটা ঢালের উপর তোল, আর ঢালকে উঁচু করে ধর। তো উনি ঢালের উপর দাঁড়ালেন, অন্যরা ঢালকে উঁচু করে ধরলেন, উনি ওখান দিয়ে গিয়ে টপকে উঠলেন দেয়ালের উপর, আর দেয়াল থেকে লাফ দিয়ে ভেতরে নামলেন। নেমে এসে দরজা খুলে দিলেন। ওখানে ভেতরে হাজারো বাহিনী তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তো এত হাজারো লোকের মধ্যে একজন লোক লাফ দিয়ে পড়ল, তারপর দরজাও খুলে দিল, এরা সব দাঁড়িয়ে করল কী? ওরা ঢাল তলোয়ার নিয়ে হাজার হাজার লোক পাহারা দিচ্ছে, এই পাহারা তাহলে কী পাহারা দিল? হিম্মত এমন জিনিস যে এর মোকাবেলায় শত্রুর কোন বুদ্ধি কাজ করে না। থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঢাল তলোয়ার সব কিছু নিয়ে। ওদের হাজারো লোকের চোখের সামনে লাফ দিয়ে নামলো, দরজা খুলল, কেউ কিচ্ছু করল না।

আল্লাহ তাআলা যে মেহেরবানী করে আমাদেরকে হিম্মত দিয়েছেনএই অসুবিধার মোকাবেলায় চলতে পারছিএটা আল্লাহ তাআলার বহুতই বড় মেহেরবানী বহুতই বড় মেহেরবানী। আমাদের দেশের লোক, আমরা জানি যে একটা গ্রামে যদি একজন পুলিশ ঢুকে, গ্রাম খালি হয়ে যায়, টিকে না। আর সেই জায়গায় জেনেশুনে গিয়ে ওখানে ঢুকল। এক জামাত গেল, পরে আবার আরেক জামাত গেল। কাকরাইলে বৃহষ্পতিবারে মারার পরে প্রথম জামাত যখন জেলে গেল, এরপরে আমাদের কাছে দেশের ভেতর থেকে এমনকি বিদেশ থেকে পর্যন্ত খবর এলো যে, এবার তারা ওয়াসিফ পক্ষ বিরাট প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার আর জেল-টেল নয়, এবার একেবারে পিষে শেষ করে ফেলবে। এসব খবর এল, আর একেবারে যে অবাস্তব, উড়িয়ে দেব তাও নয়। বিভিন্নভাবে খবর আসছে, বিশ্বাস করার মত। আলাদা করে কেউ কেউ আমার কাছে পরামর্শের জন্যেও গেল যে এরকম কথা শোনা যাচ্ছে, কী করা? কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী, আল্লাহ তা’আলা সাথীদেরকে হিম্মত দিয়েছেন, এইসব খবর-টবর তাদের কানে গেছে, শুনেছেও, কিন্তু গিয়ে হাজির হয়েছে, ওখানে আবার বিলি করেছে।

তো যখন এরা দেখেছে যে, কোন কিছুতেই থামছে না, তখন আর কিছুই করতে পারলো না। মনোবল নষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলাই মেহেরবানী করে আমাদেরকে এই হিম্মত দিয়েছেন, আল্লাহর বহুত বড় মেহেরবানী। হাজারো ঢাল তলোয়ারের চেয়ে এতটুকু হিম্মত বহুত বড় জিনিস। ঢাল তলোয়ার সব কিছু থাকলো, হিম্মত যদি না থাকে তো সব ফেলে দিয়ে পালিয়ে যাবে।

বদরের সময় মুসলমানদের কাছে কী ছিল? আল্লাহর দেয়া হিম্মত ছিল। খেজুরের ডাল নিয়ে তলোয়ারের মোকাবেলা করেছেন। খেজুরের ডাল দিয়ে তলোয়ারের মোকাবেলা হয়? কিন্তু আল্লাহ তা’আলা সাহায্য করেছেন, ইস্তেকামত দিয়েছেন। তো আল্লাহ তা’আলা বহুত মেহেরবানী করে কাজ বহুত দূর এগিয়ে দিয়েছেন। আমরা তো নামে মাত্র, অল্প কিছু করলাম, আল্লাহ তা’আলাই করলেন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আসর আল্লাহর ফজলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

গত পরশু কয়েকজন আলিম আমাদেরকে ডাকলেন। এর মধ্যে তিনজন হচ্ছেন এমন যে, তাদের মসজিদ থেকে জামাত বিতাড়িত হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত ইনারা কেউ নড়েননি। কিন্তু তারই মসজিদ থেকে যখন জামাত বিতাড়িত হয়ে গেল, তখন উনার মনে আঘাত লেগেছে, ধাক্কা লেগেছে। তারপর ওরকম তিনজন খতীব নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেছেন। তারপর তারা একটা মাদরাসায় যোগাযোগ করেছেন কয়েকজন ওলামা। তারপর সকালবেলা একত্রিত হলেন, আমরাও গেলাম, তো কথাগুলো শুনলেন।

আমরা এটাই তো চাচ্ছিলাম যে মানুষ ফিকিরবান হোক। ফিকিরবান তখন হয়েছেন যখন উনার মসজিদ থেকেই জামাতকে বিতাড়িত করেছে। তো তাদের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা হচ্ছিল, কথার মধ্যে বললাম যে তারা অনেক মেরেছে, তবে ইদানিং আর মারছে না। আমি এই কথা বললাম ইদানিং জামাতকে বের করে দেয়, কিন্তু ইদানিং আর মারছে না। যখন আমি বললাম ‘ইদানিং আর মারছে না’, উনি বললেন আমার মসজিদ থেকে মেরেছে, লাথি মেরেছে, চড় মেরেছে। উনিই বললেন যে আমার মসজিদ থেকে মেরেছে। ঐ পলিটেকনিক মসজিদ থেকে। তো এই কথা আমার খেয়াল ছিল না, সে জন্য বললাম ইদানিং আর মারছে না। কিন্তু খতীব সাহেব বললেন, “না, মেরেছে”। এই কথা বলা ‘না মেরেছে’ মানে কতটুকু মনোবল! মন এদিকে চলে এসেছে যে, উনিই বলছেন মেরেছে। আর এটার মোকাবেলার এত ফিকির করছেন।

মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী সাহেব আমাদেরকে দুইবার ডাকলেন। প্রথমবার যা কথা হল বেশী কিছু অগ্রগতি নয়। ২য় বৈঠকে ওয়াসিফ, আব্দুল্লাহ, ইঞ্জিঃ আনিস এরা তিন জনই স্বীকার করল যে, আমরা মারিনি। লিফলেট বিতরণ যারা করেছে এরা মারেনি। এত দিন পর্যন্ত কিন্তু ওরা একেবারে ঢালাওভাবে বলে আসছে যে, ‘লিফলেট বিতরণকারীরা আমাদেরকে মেরেছে’। ‘আমাদেরকে মেরেছে, ওরা নিজেরা মারামারি করেছে’- এই অভিযোগ গুলো করে আসছে। ঐ ওখানে ওরা তিন জনই স্বীকার করেছে যে, লিফলেট বিতরণকারীরা মারেনি। যদিও এই স্বীকৃতি ঐ কামরার ভিতরেই। বাইরে আবার আগের কথাই বলছে। কিন্তু এক জায়গায় তো স্বীকার করল। এটাও স্বীকার করেছে যে, কাকরাইলে বদ্ধ কামরার ভিতরে লিফলেট বিতরনকারীদেরকে মারা হয়েছে। আমরা মেরেছি-তা নয়। ওরাও মারেনি, আমরাও মারিনি- এগুলো গায়েবী মার! কিন্তু এটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, কাকরাইলের কামরার ভিতরেই মারা হয়েছে।

অনেকগুলো জিনিস স্বীকার করেছে। ঠেকাতে পারবে না, আস্তে আস্তে। একটা বাঁধ যখন ভাংতে আরম্ভ করে, তো প্রথম প্রথম একটু একটু করে পানি যায়, তারপর এক পর্যায়ে গিয়ে আর কোন সুরত থাকে না, সামাল দিতে পারে না।

আল্লাহর ফজলে অগ্রসর হয়েছে, আল্লাহ তা’আলাই মেহেরবানী করে কাজকে নিয়ে যাচ্ছেন। কাসেমী সাহেব তারপরে কাকরাইলে গিয়েছিলেন। কাকরাইলে গিয়ে নাকি দুটো প্রস্তাব দিলেন যে, মাহফুজ হান্নান আর উসামা- এদেরকে কাকরাইল থেকে সরাও। আর ৩য় প্রস্তাব আমাকে জুড়াতে হবে। যাই হোক, ৩য় টা থাকুক, প্রথম দুটো। তো ওরা নাকি অপারগ হয়েছে যে, ‘আমরা পারব না’। তারা জানে তাদের মাথার উপর সওয়ার হয়ে আছে, কিন্তু করবার কিছু নাই। সবাই নিজে নিজেকেই অসহায় বানিয়ে ফেলেছে। আর এখন মাথার উপর লাফাচ্ছে ওরা। তো ‘আমরা কিছু করতে পারব না’।

এরপরে ফিরে এসে উনি আরো উলামাদেরকে ডাকলেন। গতকালকে চার-পাঁচ জন বেশ পরিচিত উলামায়ে কেরাম ছিলেন। চিটাগাংয়ের মাওলানা জুবায়ের সাহেব ছিলেন, খালিদ সাইফুল্লাহ সাহেব, মুফতি মিজান সাহেব ছিলেন। তো ওরকম কয়েক জনকে ডাকলেন। মানে এটা বোধয় উনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, একটা বড় জামাত না হলে ওখানে কিছু কার্যকরী হবে না। যেটা আমরা আগে থেকেই জানতাম যে একা উনার কথায় কিছু হবে না। আমাদেরকেও ডেকেছিলেন, কিছু কথাবার্তা হল। তো আল্লাহর ফজলে মানুষ ফিকিরমন্দ হচ্ছে, উলামারাও ফিকিরমন্দ হচ্ছেন। আর উলামারা যদি ফিকিরবান একটু সক্রিয়ভাবে হন, আওয়াম তো সাথে আসবেই। আল্লাহই করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা যে, আল্লাহ মেহেরবানী করে আমাদেরকে এই কাজের জন্য নির্বাচন করেছেন। কাজ কিন্তু অনেক বড়। তাবলীগ বহুত বড় কাজ, আর তাবলীগকে রক্ষা করার কাজ আরো বড় দামী। আর এই তাবলীগকে রক্ষা করার এত বড় কাজ- তার জন্য আল্লাহ তা’আলা আমাদের মত সাধারণ মানুষদের নির্বাচন করেছেন। আলিম কিন্তু নেই-ই। সাধারন মানুষ, একেবারেই সাধারণ মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে আমাদেরকে নির্বাচন করেছেন আর আমাদেরকে দিয়ে আল্লাহ তা’আলা কাজ করাচ্ছেন।

এই মেহনত আরম্ভ হয়েছে কত দিন হল? মোটামুটি দুই বছরের মত হবে, তাও সম্পূর্ণ হয়ত হয়নি। তো এর মধ্যে আল্লাহর ফজলে ভিতরে ভিতরে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওলামারা রীতিমত কথাবার্তা শুনছেন। আজকে যে মালিবাগ মাদরাসায় গেলাম মাওলানা মাওলানা আশরাফ আলী সাহেবের কাছে, তাঁর কাছে আগেও গিয়েছি- কথা শুনেনই নি। আজকে ফিকিরের সাথে সব কথা শুনলেন। তো এগুলো আগে শুনেন নি, এখন শুনছেন কেন? কারন ফিকির পরিবর্তন হয়েছে আর এই পরিবর্তন হওয়ার পেছনে এই মার খাওয়াটাই কাজ করেছে

১ম দিন মাওলানা কাসেমী সহেবের কাছে যখন বসা হল, ওখানে মোটামুটি সবাই লিফলেট দেয়াকে অপছন্দ করলেন। “এটা বিরাট একটা হাঙ্গামা করলেন, এটা করা কি ঠিক হল”? বোঝালাম যে, হাঙ্গামা আমরা করলাম নাকি হাঙ্গামা তারা করল? আমরা লিফলেট দিলাম, ওরা চুপ থাকলেই হত, মারল কেন? ওরাই হাঙ্গামা করেছে, কিন্তু মানুষের নজর উল্টো। তো যাই হোক, কাসেমী সাহেব বলছেন যে এরকম, হাঙ্গামা শব্দ বলেন নি, কি জানি কি শব্দ বললেন যে লিফলেট দেয়াটা কি ঠিক হল? তো আমি বললাম, লিফলেট যদি দেয়া না হত আর এই মারধোর না হত, তাহলে আপনি কথা শুনতেন? তখন চুপ হয়ে গেলেন, বললেন যে, “হ্যাঁ, সেটাও ঠিক”। নিজেই বললেন যে, তাহলে তো আমরা আসতাম না। এখন আল্লাহর ফজলে আসছেন।

এজন্য আল্লাহর কাছে শুকুর আদায় করা, আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে আমাদেরকে বড় একটা কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন। এ জন্য কিছু অসুবিধা বরদাস্ত করা। এটা নিয়ামত। সাহাবারা কত কষ্ট করেছেন! আমরা কিতাবের মধ্যে পড়ি বেলাল রাযিআল্লাহু আনহুর কথা, খাব্বাব রাযিআল্লাহু আনহুর কথা। তো উনাদের ঐ ধারে কাছে যাওয়াও তো সম্ভব নয়, কিন্তু একটা চড় থাপ্পর খাওয়া যেটা সামান্য জিনিস, সেটাও তো এই জামানায় কোন চিন্তার মধ্যেই ছিল না। যেখানেই যাও এস্তেকবাল। জামাত যাওয়ার সাথে সাথে বলে ‘আমাদের মাশোয়ারা হয়ে গেছে, তিন দিন দাওয়াত, আমাদের মসজিদে কোন রান্না-বান্না হয় না, এটাই উসুল’। তো এটাই তো চলছে। এখন আল্লাহ তা’আলা নতুন কিছু রং দেখাচ্ছেন। প্রথম প্রথম জামাত যেগুলো যেত তাদেরকে তাড়িয়ে দিত, মেওয়াতিদের জামাত। ওরা তা থেকে যে নূর পেয়েছে ৩ দিন সময় দিয়ে, ১০ দিন সময় দিয়ে যে নূর পেয়েছে, যে তরক্কী হয়েছে, পরবর্তীতে চিল্লা দিয়েও তার কিছুই হত না। কারণ ঐ হালত আর নাই।

আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে এ কাজের ফায়দা আমাদেরকে আবার দিচ্ছেন, কিছু কুরবানীর ভিতর দিয়ে। এ জন্যে আল্লাহর কাছে খুব শুকুর আদায় করা। আল্লাহ তা’আলা কবুল করুক।

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه

سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَ اَتُوْبُ اِلَيْكَ

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ  عَمَّا يَصِفُوْنَ وَ سَلَامٌ عَلٰى الْمُرْسَلِيْنَ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

Leave A Reply