১। ফ্রান্সে স্যারের তাবলীগের মেহনত শুরুর দিকে প্যারিসে উনার অবস্থান স্থলের নিকটবর্তী দুটি খাবার হোটেল ছিল, যার একটি ছিল মুসলমানদের পরিচালিত এবং অন্যটি পরিচালিত হতো ইহুদীদের দ্বারা। মুসলমান পরিচালিত হোটেলটিতে রান্নাবান্নায় পাক নাপাকীর শরীয়তের সীমা রেখার অনুসরনে দুর্বলতা ছিল। কিন্তু ইহুদীদের হোটেলটিতে রান্নাবান্নায় হালাল হারামের বিষয়টি শক্তভাবে খেয়াল রাখা হতো। খাবার গ্রহনের জন্য কোন হোটেলে যাওয়া ভালো হবে তা জানার জন্য স্যার তৎকালীন সেখানকার বড় আলেম ও আল্লাহ ওয়ালা প্রফেসর হামিদুর রহমান সাহেবের নিকট এই সমস্যার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। স্যার বলেন উনি আমাকে মুসলমানদের পরিচালিত হোটেলেই সতর্কতার সাথে খাবার গ্রহনের পরামর্শ দেন।
২। এক বয়ানে স্যার বলছিলেন, কোরআন শরীফ স্পর্শ করতে শারীরিক পবিত্রতা লাগে, আর কোরআন শরীফ বুঝতে হলে আত্মার পবিত্রতা লাগে। এটা হুদাল্লিল মুত্তাকিইন, মুত্তাক্বিনদের জন্য হেদায়েতস্বরূপ।
৩। এক বয়ানে স্যার বলছিলেন, আগন্তক দেখে বাসার কুকুর ঘেউ ঘেউ করলো, আর বাড়ীর মালিকের ইশারায় কুকুর থেমে গেলো। একবার বাসায় চোর দেখেও কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করে, আর মালিকের ইশারা না পেয়ে চোরকে তাড়া করে। কুকুর এখানে মালিকের বন্ধু কে আর মালিকের শত্রু কে তা চিনে না, ব্যাক্তিগত (তার নিজস্ব জাতি সত্তার) কোন সম্পর্ক বিবেচনায় আনে না। মালিকের কারনেই বন্ধুত্ব আর মালিকের কারনেই শত্রুতা। বন্ধুত্ব আর শত্রুতা উভয়ই যেনো মালিকের (আল্লাহর) জন্য হয়, মালিকের সন্তুষ্টির দিকে রেখে হয়, ব্যাক্তিগত জজবা, সম্পর্ক, শত্রুতা কোনটা যেনো প্রাধান্য না পায়।
৪। নাটোর হাজীপাড়া মসজিদে পুরাতন সাথীদের মধ্যে এক মুজাকারায় স্যার বলছিলেন, বিয়েতে অনেকে কনের হাতে, মেয়ের হাতে মেহেদী লাগান। আর এই জন্য যেই মহিলা শীলপাটা দিয়ে মেহেদী বাটে সে বার বার নিজের হাতের দিকে তাকায় আর দেখে তার নিজের হাত রঙিন হচ্ছে কিনা। যে মেহেদী ঐ বাটনেওয়ালার নিজের হাত রাঙাতে পারে না, সেই মেহেদী কনের হাতও রাঙাতে পারবে না। আর ঐ বাটনেওয়ালা মহিলা যদি নিজের হাতের দিকে না তাকিয়ে মেহেদী বেটেই যায় আর যথারীতি ঐ বাটা মেহেদী পাতা কনেকে লাগানো হলো, আর দেখা গেলো হাত রঙিন হলো না, তখন প্রশ্ন আসবে আসলে ওটা মেহেদী ছিলো নাকি ঘাস ছিলো? আমরা মেহনত করি অন্যের উপর, অন্যের পরিবর্তন করার চেষ্ঠা করি। হুশিয়ার মানুষ হিসেবে নিজের দিকেও বার বার তাকানো যে এই মেহনত দ্বারা আমার কতটুকু পরিবর্তন হলো। যে মেহনত নিজের পরিবর্তন আনতে পারে না, সেই মেহনত অন্যের হেদায়েত আনবে কিভাবে।
৫। শাহ আলম ভাই বলেন, স্যার এতোটাই সাধারণ ও স্বাভাবিক মেজাজের ছিলেন যে এস্তেমার মাঠে বিদেশীদের টেন্টে আরবদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে একটু ফ্রি হলে আমার পি.এইচ.ডি থিসিসের কারেকশনের জন্য দেখাতাম, আমিও স্যারকে দেখানোর সাহস পেতাম আর স্যারও ফ্রি হলেই বা বিশ্রামের সময় দেখে দিতেন। এরকম কথা স্যার কখনো বলেননি, এতোবড় এস্তেমা, সারা দুনিয়ার মানুষ দ্বীনের ফিকির নিয়ে একত্রিত হয়েছে, আমি এতো এতো ব্যাস্ত, বিদেশী মেহমানদের সাথে মোলাকাত ও দ্বীনি ফিকির নিয়ে আছি, আর তুমি কিনা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দুনিয়াবী ফিকির নিয়ে এখানে এসেছো।
৬। একসময় আমার ঢাকা যাবার কথা শুনে লুৎফর ভাই (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক), উনার বিয়ের এক প্রস্তাব সম্পর্কে স্যারের মতামত জানার জন্য স্যারের সাথে দেখা করতে বললেন। স্যার ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় ছিলেন, থাকতেন ঢাকা সোবহানবাগে। গাইবান্ধার এক ধনী ব্যবসায়ীর মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব ছিল। স্যার বিস্তারিত শুনে বললেন, যে জিনিষ দেখে বিয়ে করা হয় বা বিয়ে দেয়া হয়, বিয়ের পর বিপরীত পক্ষের কাছে ঐ জিনিষের গুরুত্ব থাকে, দাপট থাকে, ঐ জিনিষের হেফাজতের ফিকির গালেব থাকে। আমি বললাম, স্যার একটু খুলে বললে আমার বুঝতে সহজ হবে। স্যার বললেন, মনে করো কেউ খুব সুন্দর দেখে বিয়ে করলো, বিয়ের পর ঐ মেয়ের সোর্ন্দয্যের বড়াই, রূপচর্চা, রূপচর্চার জিনিষ পত্রের ফিকির, রূপের কারণে অন্যদের তাচ্ছিল্য ইত্যাদি তার মধ্যে থাকবে। অনুরূপ কেউ যদি মেয়ের বিয়ের জন্য পদ দেখে জামাই নির্বাচন করে, বিয়ের পর সেই জামাইয়ের পদের বরাই থাকাটাই স্বাভাবিক। দুইপাশেই (ছেলে ও মেয়ে উভয় দিকে) নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই কথা, মাল দেখে বিয়ে করলে মালের, বংশ দেখে বিয়ে করলে বংশের গুরুত্ব দাপট ইত্যাদি থাকবে। দ্বীন দেখে বিয়ে করলেও দ্বীনের, দ্বীনদারীর হেফাজতের চিন্তা মাথায় থাকবে এবং দ্বীনদারীকেই বড় আকারে দেখবে।
৭। মসজিদে নববী থেকে নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে সুন্দর বিদেশী সুগন্ধী রাস্তায় বিক্রি হতে দেখে কেনার আগ্রহ হয়। স্যারের কাছে তা কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি এই বলে যে দেশে ফিরে আমার কর্মস্থলের প্রধানকে হাদীয়া দিতে চাই। স্যার খুব হাল্কাভাবে মাথা কাত করে, অল্পস্বরে, খুব মহব্বতের সাথে বললো, “থাক, কিনো না” (আমার কাছে মনে হলো, স্যার এটা বলতে চাচ্ছেন যে এক উদ্দেশ্য নিয়েই চলো)।
৮। ফ্রান্সের জামাতের নুসরত ও সিংড়ার উপজেলা আমীর সাহেবের (যিনি অসুস্থ ও বিছানারত ছিলেন) সাথে দেখা করার জন্য সিংড়ায় যাবার প্রোগ্রাম হয়। দেখা সাক্ষাৎ শেষে সিংড়ার সাথীরা পুরানা সাথীদের জোড় উপলক্ষে অতিরিক্ত একদিন থাকার ফায়সালা করেন। ঐসময় কিশোরগজ্ঞ থেকে দুই ভাই স্যারের সাথে দেখা করতে সিংড়ায় আসেন। যাদের একজনের পরিবারের বিস্তারিত খোঁজখবর স্যার রাখতেন, উনি তাবলীগে সময় লাগানোর জন্য পিতার বিরাগভাজন ছিলেন। তার সাক্ষাতে ও কুশল বিনিময়ে স্যার তার অসুস্থ ও বয়স্ক পিতার শরীরের হালত জিজ্ঞাসা করেন। ঐ সাথী স্যারের জিজ্ঞাসার জবাবে উত্তর দিলেন, এখনতো আগের চেয়ে আরো মোটাতাজা হয়েছে। তার এই জবাব শোনার সাথে সাথেই স্যারের চেহারায় খুব রাগান্বিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়, খুব রাগের সাথে স্যার বলেন এমন ভাষা মানুষ গরু ছাগলের ব্যাপারে ব্যবহার করে, উনিতো তোমার পিতা। পিতার সম্পর্কে এমন তাচ্ছিল্যমূলক জবাবে স্যার এতটাই বিরক্ত ছিলেন যে, পরবর্তী দুই দিন স্যারের সাথে ঐ ভাইয়ের অবস্থানকালীন স্যার তার সাথে আর কোন কথা বলেননি।
৯। রাইব্যান্ড থেকে ফেরার পথে অসুস্থ পুরানা মুরব্বী হাজী সেলিম সাহেব (মাওলানা ফাহিম সাহেবের পিতা) এর সাথে দেখা করার জন্য লাহোরে উনার বাসায় যাবার প্রোগ্রাম হয়। স্যারকে বাসায় নেবার জন্য উনি উনার নাতিকে দিয়ে গাড়ী পাঠিয়ে দিলে মার্কাজ থেকে গাড়ীতে চড়ে রওনা হই। মার্কাজ থেকে বের হয়ে অল্প দূরে (যেখানে রাস্তার দুইধারে অনেক দোকান ও বাজার) আসার পর আমি স্যারকে বললাম যে আত্মীয় স্বজনের জন্য কিছু হাদীয়া কিনতে চাই। স্যারের এজাজত নিয়ে আমি ও মাহবুব মোরশেদ (মার্কাজ থেকে আমাদের এগিয়ে দিতে এসেছিল) গাড়ী থেকে নেমে বাজার করতে বের হই। স্যার একা গাড়ীতে বসে ছিলেন ও গাড়ী আমার জন্য রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছিলো। প্রায় পৌনে এক ঘন্টার বাজার সেরে গাড়ীতে এসে বসলাম, খুব ভয়ে ছিলাম এই ভেবে যে সফর থেকে ফেরার পথে রাস্তায় গাড়ী থামিয়ে এতো লম্বা সময় বাজার করায় স্যার নিশ্চয়ই খুব বিরক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে লাহোরে স্যারের জন্য মেজবান হাজী সেলিম সাহেব অপেক্ষায় আছেন। স্যার একা একা বসে ছিলেন, আবার মেজবানের সময় নষ্ট করলাম, ইত্যাদি ভেবে আমি ভয়ে ছিলাম। কিন্তু স্যারের মধ্যে রাগ বা বিরক্তির কিছু না দেখে আমি কি কি বাজার করলাম এবং কার জন্য কি কি নিয়েছি তা স্যারকে শুনালাম। স্যার জানতেন যে বিয়ের মাত্র ১৫ দিন পরেই ছিল আমার ঐ সফর। স্যার বড় মহব্বতের সাথে বললেন, বাসায় গিয়ে তুমি নিজেই সব বন্টন না করে কাকে কোনটা দিবে তা তোমার আম্মার সামনে সব রেখে তার পরামর্শ নিয়ে বন্টন করবে। ঐ সময় স্যারের ঐ পরামর্শটা ছিল আমার জীবনের জন্য একটা মাইলফলক।
১০। শামসুজ্জামান ভাই (জামনগর, নাটোর) বলেন, একদিন বিকেলে স্যার দেখা সাক্ষাৎ ও সাথীদের খোঁজ খবর নিতে আমাদের হলে আসেন। দেখা সাক্ষাৎ শেষে আমি রাতে হলে থাকতে বললে স্যার নিঃসংকোচে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের রুমে ছাত্রদের সাথে হলে থাকতে রাজী হয়ে যান। শেষ রাতে তাহাজ্জ্বুদের সময় স্যার বলেন আমি রোজা রাখতে চাই। আমি পাতিলে থাকা অল্প কিছু ভাত প্লেটে বেড়ে স্যারকে সেহেরী খাবার জন্য দেই। স্যার পাতিলটি নিয়ে পাতিলের ভেতরে চতুপার্শ্বে লেগে থাকা অবশিষ্ট সবগুলো ভাত এক এক করে তুলে প্লেটে নিয়ে নেন। পাতিলটা এভাবেই মুছা ও খালি হয়ে যায় যে একটি ভাতও অবশিষ্ট থাকে না যা পাতিল ধোয়ার সময় ফেলে দেয়া হতো বা নষ্ট হতো।
১১। স্যারের সাথে হজ্জ্বের সফরে, স্যারের শেষ হজ্জ্ব, জেদ্দা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে ভেতরেই আমরা ফজরের নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। স্যার আমাকে সামনে যেতে বলেন নামাজ পড়ানোর জন্য। আমরা জামাতের জন্য দাঁড়ালে বিভিন্ন দেশের আরো অনেক হাজী জামাতে শরীক হলে জামাত অনেক বড় হয়ে যায়। আমি সময় কম ও হাজী সাহেবদের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করার তাকাদা মনে করে প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা এখলাস দিয়ে নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে জলদী বের হবার তৈয়ারীর জন্য দাঁড়ালে স্যার একটু নারাজীর স্বরে বললেন, “হজ্জ্বের সফর শুরু করলে অভিশাপ দিয়ে”। আমার কাছে তখন নিজিকে এই ভেবে অপরাধী মনে হচ্ছিল যে সূরা লাহাব ছাড়াওতো আরো অনেক ছোট সূরা ছিল।
১২। এন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে তাবলীগের চলমান সমস্যার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (অবঃ) মজ্ঞুর স্যার স্যারের সাথে দেখা করতে আসবেন শুনে মাহফুজ ভাই বললেন স্যার উনি তো ওয়াসিফের লোক (উনার সাথে কথা বলে খুব একটা সুবিধা হবে না)। মাহফুজ ভাইয়ের কথা শুনে স্যার বললেন এখন যদি ইনজিনিয়ার মাহফুজ হান্নানও (তাবলীগের চলমান সমস্যার ব্যাপারে প্রকাশ্য মাশোয়ারায় সমাধান চাওয়ার কারনে অনেক সাথীকে আটক রেখে যে নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং যার/যাদের প্রত্যক্ষ মদদে অনেক সাথীকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জেলে দেওয়া হয়) আসে এবং আমার সাথে কথা বলতে চায়, আমি তার সাথেও কথা বলবো।
১৩। একবার স্যার বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত জানার পরও এই দোয়া করেন,
فَلا تَكِلـني إِلى نَفْـسي طَـرْفَةَ عَـيْن، وَأَصْلِـحْ لي شَأْنـي كُلَّـه
“আয় আল্লাহ আমাকে এক মুহুর্তের জন্যও আমার নিজের উপর সোপর্দ কোরেন না, এবং আমার সমস্ত বিষয় আমার জন্য ঠিক করে দেন।” খোদ আল্লাহ তায়ালার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আল্লাহ পাকের ফায়সালা নিয়ে চলতো, নিজে নিজে চলতেন না। তো আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের নিজে নিজে ফায়সালা করে চলাতো গোমরাহী।
৫ Comments
NNIHD TLd mjMBwtaz gGChrn AIuAugG
join our charity today join our charity today .
Лучшие ИБП для бизнеса, получите информацию.
Рейтинг лучших ИБП, читайте.
Обзор функций источников бесперебойного питания, узнайте больше.
Рекомендации по выбору источников бесперебойного питания, в нашем гиде.
Источники бесперебойного питания: что важно знать, в нашем обзоре.
Советы по покупке источников бесперебойного питания, с нашими рекомендациями.
Источники бесперебойного питания: как выбрать лучший, здесь.
Как работает источник бесперебойного питания, читайте.
Как продлить срок службы источника бесперебойного питания, читайте.
Тенденции рынка источников бесперебойного питания, посмотрите.
Основные рекомендации по использованию ИБП, узнайте.
Идеальные источники бесперебойного питания для бизнеса, читайте.
Источники бесперебойного питания: советы и хитрости, узнайте.
Сравнение ИБП: какой выбрать?, в нашем обзоре.
Как установить источник бесперебойного питания?, на сайте.
Идеальные решения для бесперебойного питания, в гиде.
Как продлить срок службы ИБП, читайте.
Сравнение моделей источников бесперебойного питания, узнайте.
Что учесть при выборе источника бесперебойного питания, узнайте.
бесперебойники http://www.istochniki-bespereboynogo-pitaniya.ru/ .
Лучшие скины на рынке, в этом разделе.
Не пропустите, что.
скинов, доступны.
в нашем магазине.
Приобретайте.
игроков.
скины.
с лучшими предложениями.
на нашем сайте.
Заработайте, обрадуют вас.
разнообразные скины, которые вас вдохновят.
информацию о скинах.
можно найти.
Пользуйтесь, и не упустите шанс.
обновления, что.
Заполните свою коллекцию, что сделает вас особенным.
Выбирая нас, качество и надежность.
Сделайте выгодную покупку, с максимальной выгодой.
buy skins cs http://www.superskinscs.com/ .
Дизайнерская мебель премиум класса — это воплощение изысканного стиля и безукоризненного качества.
Премиум мебель — это выгодная инвестиция в стиль и комфорт вашего пространства.